দিনাজপুর এবং দখল
ছবি: দিনাজপুর গ্রুপ থেকে গৃহিত |
দিনাজপুর আমার যে কোন স্বপ্ন থেকেও বেশী কিছু। প্রচন্ড খরতাপেও দিনাজপুরের মাটিতে পা রাখলেই মনে হয়, ‘কে যেন শীতল হাতের ছোঁয়ায়, আমায় প্রশান্তি দিল।’ বার বার কোনো প্রেয়সির কাছে যদি ফিরে যেতে ইচ্ছে হয়, তাহলে সেই প্রেয়সি - দিনাজপুর। বার বার যদি কখনও জন্ম নিতে হয়, তাহলে বলবো- দিনাজপুরেই যেন হয়।
যদিও খুব ছোট বেলায় দিনাজপুর ছেড়ে, ঢাকায় আসতে হয়েছে, তবুও দিনাজপুরের জন্য এতটুকুও ভালবাসা কমেনি। কমেনি হাতছানি দেওয়ার মত ভালবাসার টান। বরং যতই দুরে আছি, ততই যেন টানটা বেশী অনুভব করি। এ যেন এক বিনা সংযোগের আত্মিক বন্ধন। এ বন্ধন ছিঁড়ার নয়। এ বাঁধন খুলে ফেলবারও নয়।
যদিও আমার জন্মস্থান দিনাজপুর শহর থেকে নব্বইটি কিলোমিটার দুরে। শহরতলির আলো আধারের স্বপ্নিল মোহময় চাকচিক্য থেকে দুরে- একটি ছোট্ট থানা শহরে। তবুও দিনাজপুর শহর যেন আমার স্বপ্নের শহর। কৈশরের স্মৃতি মনে পড়লেই, আজো অজানা এক ভাললাগা আমার সর্বাঙ্গে দোল দিয়ে যায়। পুলকিত করে তোলে তনুমন। আমি হারিয়ে যাই, আমার কৈশরের প্রারম্ভে।
একটি স্মৃতিচারণ না করলে, দিনাজপুর নিয়ে আমার এ অনুভূতির পেয়ালা থেকে গড়িয়ে পড়া আমৃতসার কিছুটা অপূর্ণই থেকে যাবে।
বাবা প্রানী সম্পদে চাকুরি করতেন আর চাকুরির সুবাদে প্রায় দিনাজপুর জেলা শহরে যাওয়া হতো। আমি তখন ক্লাশ টু-তে পড়ি। বাবার সাথে দিনাজপুরে গিয়েছি। আমার আবার সিনেমা দেখার খুব শখ। শখ বললে ভুল হবে, বলতে হবে সিনেমাটা আসলে কি? সেটা দেখার জন্যই বেশী উৎসুকতা। বাবার সাথে হোটেলে উঠেছি, সারাদিন বাবার সাথে তার অফিসের কাজে সাথে সাথে আছি, কিন্তু মনের ভিতর ঘুনপোকাটা সব সময় যেন ভিতরটা কাটছে, - সেটা টের পাচ্ছি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামে, বাবার কাজ শেষ হয় না দেখে, ভীষণ খারাপ লাগে। সন্ধ্যা নামে, দিনাজপুর শহর মায়াবী সাজে, সাজে । রিক্সায় বাবার সাথে বসে আছি, রাস্তায় লাইট গুলো আলোকিত করে আমাকে, আর আমার স্বত্ত্বাটাকে। ভরে দেয় কানায় কানায় ভালালাগা টুকু। রিক্সা কোন প্রান্ত থেকে কোন প্রান্তে ছুটছিল সেটা বুঝিনি। বুঝিনি কোন অলিগলির মধ্যে দিয়ে আমার ভাললাগার পরশটুকু ছড়িয়ে দিচ্ছিল। শুধু বুঝেছিলাম অন্য রকম ভাললাগা আমার উপর ভর করেছে।
কিন্তু ছো্ট্ট একটি অপূর্ণতা বার বার পিছনে হেচকা টেনে আটকে দিচ্ছিল। এক হোটেলে খাওয়া দাওয়ার পর, আবার রিক্সায় উঠেছি। আমি এবার কিছুটা বিরক্ত। আমরা কেন এতো রিক্সায় ঘুরাঘুরি করছি। বাবাকে বিরক্তের সুরে জিজ্ঞেস করি। বাবা বলে , ঘুরতে খারাপ লাগছে। আমি বলি, না। বাবা আমাকে রাতের সুন্দরী, রাতের দিনাজপুরকে দেখাচ্ছিলেন। রাতের দিনাজপুর যে এত সুন্দর, এত মায়াবী। আজ স্মৃতির সাগরে ডুব দিলে বুঝতে পারি। এখনো সেই ভালালাগা দক্ষিণা হাওয়ার মতো দোল দিয়ে যায়। সিনেমা হলের আসে পাশে যাওয়া হয়নি কখনো। তাই সেখানে কি হয়, তাও আমার জানা নেই। এবার সাহস করে বাবাকে বলি, বাবা সিনেমা দেখবো। বাবা আমার দিকে তাকায়, সাথে সাথে রিক্সাওয়ালাকে বলে, লিলি মোড়ে যাও। আমি বুঝিনা, লিলি মোড়ে কেন। লিলি মোড়ে আসতেই অনেক লাইটের আলোয় বিরাট পোস্টার চোখে পড়ে। পোস্টার টা পড়ার চেষ্টা করছিলাম। তিনটা অক্ষর বানান করতে খুব কষ্ট হয়নি। কিন্তু উচ্চারণ করতে একটু সময় লেগেছিল। দ-খ-ল, হ্যাঁ সিনেমাটির নাম ছিল দখল। আমাকে দাঁড় করিয়ে রেখে বাবা টিকেট কেটেছে। আমরা সিনেমা হলে ঢুকলাম। বিরাট পর্দায় বড় বড় মানুষ, অবাক হয়ে দেখছি। ভাল লাগছে। সেই বয়সেই বুঝতে পারছি, সিনেমায় কোন কিছু নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে, অন্যায় ভাবে কোন কিছু কেউ কেড়ে নিচ্ছে। তাই ঘটনার তালগোলে আমিও হারিয়ে যায়। শুধু স্মৃতির আকাশে এখনো মাঝে মাঝে বেজে উঠে ‘ভালবাসা এমন একটি গান, কথা আর সুরে বাধা, যেন দুটি প্রান’ আজো ভুলিনি। অবিশাস্য।
দিনাজপুর থেকে আজ অনেক কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে। ভালবাসার বন্ধনকে কেউ ছিঁড়ে ফেলার মত, ছিঁড়তে চাইছে। সিনেমার দখলদারদের কথা গুলো মনে নাই, কিন্তু আজো এক শ্রেনীর দখলদারদের হাতে আমরা বন্দি। বন্দি আমাদের বিবেক। বন্দি আমার ভালবাসা-ভালালাগা প্রকাশ করার ইচ্ছে টুকু। আমাদের ভালবাসা-ভাললাগা আমরা লালন করতে চাই, একান্ত আমাদের মত। একান্ত নিজের মতো করে। কোনো দখলদার যেন এ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। এ কামনায়। ভাল থেকো দিনাজপুর। ভাল রেখো আমাদেরকে।
যদিও খুব ছোট বেলায় দিনাজপুর ছেড়ে, ঢাকায় আসতে হয়েছে, তবুও দিনাজপুরের জন্য এতটুকুও ভালবাসা কমেনি। কমেনি হাতছানি দেওয়ার মত ভালবাসার টান। বরং যতই দুরে আছি, ততই যেন টানটা বেশী অনুভব করি। এ যেন এক বিনা সংযোগের আত্মিক বন্ধন। এ বন্ধন ছিঁড়ার নয়। এ বাঁধন খুলে ফেলবারও নয়।
যদিও আমার জন্মস্থান দিনাজপুর শহর থেকে নব্বইটি কিলোমিটার দুরে। শহরতলির আলো আধারের স্বপ্নিল মোহময় চাকচিক্য থেকে দুরে- একটি ছোট্ট থানা শহরে। তবুও দিনাজপুর শহর যেন আমার স্বপ্নের শহর। কৈশরের স্মৃতি মনে পড়লেই, আজো অজানা এক ভাললাগা আমার সর্বাঙ্গে দোল দিয়ে যায়। পুলকিত করে তোলে তনুমন। আমি হারিয়ে যাই, আমার কৈশরের প্রারম্ভে।
একটি স্মৃতিচারণ না করলে, দিনাজপুর নিয়ে আমার এ অনুভূতির পেয়ালা থেকে গড়িয়ে পড়া আমৃতসার কিছুটা অপূর্ণই থেকে যাবে।
বাবা প্রানী সম্পদে চাকুরি করতেন আর চাকুরির সুবাদে প্রায় দিনাজপুর জেলা শহরে যাওয়া হতো। আমি তখন ক্লাশ টু-তে পড়ি। বাবার সাথে দিনাজপুরে গিয়েছি। আমার আবার সিনেমা দেখার খুব শখ। শখ বললে ভুল হবে, বলতে হবে সিনেমাটা আসলে কি? সেটা দেখার জন্যই বেশী উৎসুকতা। বাবার সাথে হোটেলে উঠেছি, সারাদিন বাবার সাথে তার অফিসের কাজে সাথে সাথে আছি, কিন্তু মনের ভিতর ঘুনপোকাটা সব সময় যেন ভিতরটা কাটছে, - সেটা টের পাচ্ছি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামে, বাবার কাজ শেষ হয় না দেখে, ভীষণ খারাপ লাগে। সন্ধ্যা নামে, দিনাজপুর শহর মায়াবী সাজে, সাজে । রিক্সায় বাবার সাথে বসে আছি, রাস্তায় লাইট গুলো আলোকিত করে আমাকে, আর আমার স্বত্ত্বাটাকে। ভরে দেয় কানায় কানায় ভালালাগা টুকু। রিক্সা কোন প্রান্ত থেকে কোন প্রান্তে ছুটছিল সেটা বুঝিনি। বুঝিনি কোন অলিগলির মধ্যে দিয়ে আমার ভাললাগার পরশটুকু ছড়িয়ে দিচ্ছিল। শুধু বুঝেছিলাম অন্য রকম ভাললাগা আমার উপর ভর করেছে।
কিন্তু ছো্ট্ট একটি অপূর্ণতা বার বার পিছনে হেচকা টেনে আটকে দিচ্ছিল। এক হোটেলে খাওয়া দাওয়ার পর, আবার রিক্সায় উঠেছি। আমি এবার কিছুটা বিরক্ত। আমরা কেন এতো রিক্সায় ঘুরাঘুরি করছি। বাবাকে বিরক্তের সুরে জিজ্ঞেস করি। বাবা বলে , ঘুরতে খারাপ লাগছে। আমি বলি, না। বাবা আমাকে রাতের সুন্দরী, রাতের দিনাজপুরকে দেখাচ্ছিলেন। রাতের দিনাজপুর যে এত সুন্দর, এত মায়াবী। আজ স্মৃতির সাগরে ডুব দিলে বুঝতে পারি। এখনো সেই ভালালাগা দক্ষিণা হাওয়ার মতো দোল দিয়ে যায়। সিনেমা হলের আসে পাশে যাওয়া হয়নি কখনো। তাই সেখানে কি হয়, তাও আমার জানা নেই। এবার সাহস করে বাবাকে বলি, বাবা সিনেমা দেখবো। বাবা আমার দিকে তাকায়, সাথে সাথে রিক্সাওয়ালাকে বলে, লিলি মোড়ে যাও। আমি বুঝিনা, লিলি মোড়ে কেন। লিলি মোড়ে আসতেই অনেক লাইটের আলোয় বিরাট পোস্টার চোখে পড়ে। পোস্টার টা পড়ার চেষ্টা করছিলাম। তিনটা অক্ষর বানান করতে খুব কষ্ট হয়নি। কিন্তু উচ্চারণ করতে একটু সময় লেগেছিল। দ-খ-ল, হ্যাঁ সিনেমাটির নাম ছিল দখল। আমাকে দাঁড় করিয়ে রেখে বাবা টিকেট কেটেছে। আমরা সিনেমা হলে ঢুকলাম। বিরাট পর্দায় বড় বড় মানুষ, অবাক হয়ে দেখছি। ভাল লাগছে। সেই বয়সেই বুঝতে পারছি, সিনেমায় কোন কিছু নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে, অন্যায় ভাবে কোন কিছু কেউ কেড়ে নিচ্ছে। তাই ঘটনার তালগোলে আমিও হারিয়ে যায়। শুধু স্মৃতির আকাশে এখনো মাঝে মাঝে বেজে উঠে ‘ভালবাসা এমন একটি গান, কথা আর সুরে বাধা, যেন দুটি প্রান’ আজো ভুলিনি। অবিশাস্য।
দিনাজপুর থেকে আজ অনেক কিছুই হারিয়ে যাচ্ছে। ভালবাসার বন্ধনকে কেউ ছিঁড়ে ফেলার মত, ছিঁড়তে চাইছে। সিনেমার দখলদারদের কথা গুলো মনে নাই, কিন্তু আজো এক শ্রেনীর দখলদারদের হাতে আমরা বন্দি। বন্দি আমাদের বিবেক। বন্দি আমার ভালবাসা-ভালালাগা প্রকাশ করার ইচ্ছে টুকু। আমাদের ভালবাসা-ভাললাগা আমরা লালন করতে চাই, একান্ত আমাদের মত। একান্ত নিজের মতো করে। কোনো দখলদার যেন এ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। এ কামনায়। ভাল থেকো দিনাজপুর। ভাল রেখো আমাদেরকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন