রবিবার, ৩০ জুন, ২০১৩

সান্তাল বিদ্রোহের 158 বছর পর বাংলাদেশের সান্তালরা কেমন আছে?

ভাল নেই। একদম ভালো নেই। শিক্ষা, অর্থনৈতিক, সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সান্তালরা চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। 

উচ্চ শিক্ষা তাদের জন্য সোনার হরিন। কারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে সান্তাল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট কোটা নেই। যদিও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তরবঙ্গের আদিবাসিদের জন্য কোটা আছে, কিন্তু তাও আবার ভাগ বসায় উত্তরবঙ্গের বাইরের ছাত্র-ছাত্রীরা । বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্তাল ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশুনা করার স্বপ্নই দেখে না।

সরকারী কিংবা বেসরকারী চাকুরি ক্ষেত্রে নূন্যতম সুযোগ সুবিধাই নেই।

1990 সালের পর থেকে বাংলাদেশের সান্তাল জনগোষ্টি আশঙ্কাজনক হারে কমে গিয়েছে। স্থানীয় ভূমি দূস্য, জোতদার 1855 সালের মত এখনো ক্রিয়াশীল। সামাজিক নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের বিমুখের মুখে অনেক সান্তাল পরিবার পাড়ি জমিয়েছে ভারতে। কোন সরকারই এই দিকটা দেখেনি বা দেখছে না। যদিও তাদের তকমায় লাগানো আছে, আওয়ামী লীগের ভোটার । কিন্তু গত সাড়ে 4 বছরে সবচেয়ে বেশী আওয়ামী সরকার থেকে সান্তালরা নিগৃহীত হয়েছে । বাংলাদেশের সান্তালদের জন্য দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট থানা এবং নগাঁও-এর সাপাহারা কিংবা ধামুরইহাট থানা সবচেয়ে বেশী নিরাপত্তাহীন এলাকা হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। ঘোড়াঘাট এবং ধামুরইহাটে সান্তাল হত্যাসহ প্রচুর অপরাধ সান্তালদের বিরুদ্ধে ঘটেছে। এই সরকার আসার পর পরই ঘোড়াঘাটে সরকার দলীয় লোকদের ইন্ধনে জমি নিয়ে ৪টি মারামারি. ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া এবং বিভিন্ন হুমকি’র ঘটনা ঘটেছে। সান্তালদের বিরুদ্ধে শ’খানেক মামলা হয়েছে। সেই মামলায় এই দুই থানার সান্তালরা দিশেহারা। প্রশাসন নামক রাষ্ট্রযন্ত্র সব সময় নিরব দর্শকের ভুমিকা ধারণ করেছে আবার কোন কোন ক্ষেত্রে সরাসরি সান্তালদের বিরুদ্ধে কাজ করেছে।

অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং বিচ্ছিন্নভাবে বসবাসের সুযোগে, স্বার্থনৈষী মহল সবসময় সান্তালদের উপর অন্যায় অত্যাচার চালিয়ে আসছে।

আধুনিক সমাজে সামাজিকভাবে কতটুকু নিগৃহীত। তা একটি উদাহরনের মাধ্যমে ফুটে উঠে:-
দিনাজপুর জেলায় ঘোড়াঘাট থানায় বিভিন্ন বন্দর, হাটবাজারে, চা কিংবা খাবারের দোকানে এখনও সান্তালদের জন্য আলাদা,ময়লা, ভাঙ্গা কাপ পিরিজ বরাদ্দ আছে। কোন কোন রেস্টুরেন্ট-এ তাদের খাইতেও দেওয়া হয় না।

সান্তাল বিদ্রোহের মত, গৌরবোজ্জল ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও আজ তারা সমাজে নিগৃহীত। রাষ্টযন্ত্র তাদের সম্মানীয় নিজেদের নাম পরিবর্তন করে ‘নৃগোষ্টি’ বানায়। বাংলাদেশের সান্তালরা দীর্ঘদিন ধরে নানা বঞ্চনার শিকার। তাদের উপর চলমান নিরব সন্ত্রাস। আজ তারা নিজেদের সম্মানজনক নাম পর্যন্ত হারিয়েছে। তাই বাংলাদেশের সব সান্তাল, নিজেদেরকে ‘সাঁওতাল’ বলতে চায় না। তারা নিজেদেরকে সান্তাল বলে পরিচিত করতে পছন্দ করছে। কারন এই সাঁওতাল শব্দের মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক বঞ্চনা, গঞ্জনা, নিগৃহীত, ছোট করার বা ছোট করে দেখার অভিপ্রায়। তারা সান্তাল বিদ্রোহের 158 বছর পর আবারো নিজেদেরকে সান্তাল বলে পরিচয় দিতে দৃঢ়সঙ্কল্পবদ্ধ। 

সান্তাল জাতি একটি সম্পূর্ন জাতি। এই জাতির ইতিহাস আছে, এই জাতির সংস্কৃতি আছে, এই জাতির আছে নিজস্ব ভাষা এবং এই জাতিই দাবি করতে পারে, ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম জনগোষ্টি। তাই এই দেশের মাটি, প্রকৃতির সাথে তাদের রয়েছে দীর্ঘদিনের আত্মিক সম্পর্ক। এই জাতিই একমাত্র জাতি যারা দাবি করতে পারে ‘আদিবাসি’।

সান্তাল বিদ্রোহের 158তম বার্ষিকীতে সমগ্র বাংলাদেশের সান্তালদের একমাত্র দাবি, তাদের ভাষা লেখার জন্য, যে অক্ষরমালা সঠিকভাবে তাদের ভাষা উচ্চারণ করতে পারে, এবং যুগ যুগ ধরে যে অক্ষরমালায় তারা সান্তালি ভাষা শিখে আসছে, লেখাপড়া করে আসছে সেই অক্ষরমালায়ই শিক্ষাদানের উপকরন বানানো হোক।

সান্তালরা আর কোন নতুন নিগৃহীতের শিকার হতে চায় না। তাই সান্তালি অক্ষরমালা অর্থাৎ সম্প্রসারিত রোমান অক্ষরমালায় তাদের শিক্ষার উপকরণ বানানো হোক, এটা তাদের সময়ের দাবি। মহান হুল দিবসের দাবি।

কোন মন্তব্য নেই:

About

Ghonokuasha Baskey is a Santal writer of Bangladesh. He has started writing since 1985.