অলচিকি কাদের জন্যে?
বিভিন্ন অক্ষর থেকে অলচিকি'র অক্ষরগুলো সংগৃহীত |
অলচিকির সাথে আমার পরিচয় ঘটেছিল ২০০৩ সালে। সান্তালদের অক্ষর - ব্যাস এ টুকুর জন্যেই অলচিকির প্রতি অগাধ ভালবাসায় বুকটা ভরে গিয়েছিল। যেহেতু সাহিত্য চর্চার একজন কর্মী হিসাবে, এই ভালবাসায় কোন ফাঁক ছিল না। আমার বড় পিসির পুরো পরিবার ভারতে সেটেল, পিসাত ভাইকে অনুরোধ করে একটা বইও আনালাম। পিসাত ভাই নিজেও সে সময় অলচিকি জানত না, তাই সেও আমাকে সাহায্য করতে পারল না। আমার শেখার ইচ্ছা অধরাই থেকে গেলো, মনে হচ্ছিল।
সান্তাল/হড় গ্রুপ সান্তালদের মধ্যে প্রথম কোন গ্রুপ |
কিন্তু হটাৎ ইচ্ছার বাতাসে হাওয়া বইতে শুরু করে। আর এটা ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ২০০৮ সালে সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যম ফেসবুক খুলেছি,
এক বছর ২ -৩ জন ছাড়া বন্ধুই বানাতে
পারিনি। ২০০৯ সাল হটাৎ দেখি অনেক সান্তাল ভাইবোনদের নাম ফেসবুকে ভেসে
বেড়াচ্ছে। আর দেরি কিসের, সান্তাল বন্ধুদের এড করতে থাকলাম এবং প্রায় বন্ধুরা
ভারতের। কারণ সে সময় বাংলাদেশে ইন্টেরনেট এত সহজলভ্য ছিল না। কিন্তু
তাতেও আমার মন ভরল না। সান্তাল ভাইবোনদের এক কাতারে নিয়ে আসার জন্যে ২০০৯
সালে প্রথম
Santals / Hor নামে একটি
গ্রুপ খোলা হয়। চমৎকার অভিজ্ঞতা, অনেক
সান্তাল ভাইবোনদের পেলাম, বিভিন্ন
আলোচনা হতে লাগলো।
এ ভাবে বছরের পর বছর চেষ্টা করেছি |
২০১০ সালের দিকে অলচিকি নিয়ে তুমুল
আলোচনা শুরু হল, আমার পুরাতন
ভালবাসা আবার জাগ্রত হল। আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে অলচিকি শিখতে লাগলাম।
তখন অলচিকি অনেকেই ভাল জানত না, তাছাড়া গ্রামারের দিক দিয়েও সমস্যা ছিল, তাই খুব
সুবিধা করতে পারছিলাম না, তবুও অদম্য
ইচ্ছার কারণে অক্ষর গুলো মুখস্ত করে ফেললাম। কিন্তু সময় যতই অতিবাহিত হতে থাকলো, অলচিকি আমার
কাছে আরও জটিল হতে শুরু করলো। জাতিভেদ, অরিজিনাল, ডুপ্লিকেট
ইত্যাদি বিষয় অলচিকিই টেনে নিয়ে এলো। অম্ল মধুর, চমৎকার
অভিজ্ঞতার মধ্যে আমি সেখানে একজন bãhoṅãriń পেলাম।
সেখানে প্রথম আবিষ্কার করলাম ạbiń শব্দ, যা আমরা বড়
শালা শালিদের বেলায় ব্যাবহার করি। সে যা হোক বিয়ের আগেই একজন বড় শালা পাওয়া
আমার জন্যে অনেক আনন্দের ছিল। বর্তমানে ঘটনাক্রমে আমার বিবাহিত প্রিয়তমা সহধর্মীও ঐ
পদবির।
যাহোক, সে সময় আমি
আর একটি বিদেশি ভাষা শিখছিলাম - পর্তুগিজ স্প্যানিশ এবং সেটা
কোন শিক্ষক ছাড়া। মোটামুটি ৩ মাসের মধ্যে সে ভাষার বোধগম্যতা চলে এসেছিল (বর্তমানে জাপানিজ শিখছি এবং এটা অনেক ভালভাবে) । এই
কারণে আমার কনফিডেন্স লেভেল বেড়ে গিয়েছিল যে, অলচিকিটাকেও শিখতে
পারবো। কিন্তু পারিনি। আমি সান্তাল, সান্তালি সাহিত্য চর্চা করি। তাও পারিনি।
তাহলে আমার মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। অলচিকি কাদের জন্যে?
আমি একজন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিত মানুষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েছি। আমার শেখার ধরন আর একজন অল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত লোকের শেখার ধরনের মধ্যে পার্থক্য আছে। যেমনঃ
Ạkil Sãhet́ ২০১০ |
শব্দ গঠন করতে হয় কিভাবে?
আমার শিক্ষিত জ্ঞান বলে যদি লেখার ধরন আলফাবেটিক হয়,-
তাহলে সন্ধি বা স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জন বর্ণ এর ব্যকরনসম্মতভাবে একত্রীভূত করে, শব্দ গঠন করতে হয়। আর এ উচ্চারণ উভয় বর্ণের ধারা অনুযায়ী হবে। ধন্নিগুচ্ছকে একই ধ্বনি হিসাবে বিভিন্নরূপে ব্যাবহার (Phoneme)। যেমন - ল্যাটিন অক্ষর।
আমার শিক্ষিত জ্ঞান বলে যদি লেখার ধরন আলফাবেটিক হয়,-
তাহলে সন্ধি বা স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জন বর্ণ এর ব্যকরনসম্মতভাবে একত্রীভূত করে, শব্দ গঠন করতে হয়। আর এ উচ্চারণ উভয় বর্ণের ধারা অনুযায়ী হবে। ধন্নিগুচ্ছকে একই ধ্বনি হিসাবে বিভিন্নরূপে ব্যাবহার (Phoneme)। যেমন - ল্যাটিন অক্ষর।
যদি লোগোগ্রাফিক
হয় -
ছোট ছোট ভাগে ব্যকরনগতও লেখা এবং উচ্চারণ করা। যেমন - চায়নিজ
দলমাত্রিক বা Syllabic
স্বর অনুযায়ী ভাগ করে উচ্চারণ করা, যেমন - জাপানিজ কানা। ওয়া + টার = ওয়াটার
আবুজিদা
এটাও phoneme তবে ( ব্যঞ্জনবর্ণ + স্বরবর্ণ), যেমন - দেবনাগরী। তবে এর অনেক রকম ভেদ আছে, ইন্ডিক অক্ষরগুলো যেমন - উত্তর ইন্ডিক ও দক্ষিণ ইন্ডিক এঁর মধ্যে পার্থক্য আছে। এই ইন্ডিক লিপি গুলিকে ব্রাহ্মী লিপি বলা হয়।
শব্দাংশের মধ্যে নির্দিষ্ট স্বরবর্ণ আছে, এর জন্যে কিছু ডাইক্রেটিক স্বরবর্ণ ব্যাবহার করা হয়। যেহেতু ব্রাহ্মী লিপির অন্তর্গত অনেক লিপি আছে, তাই এর অনেক রকম ভেদ আছে।
এখানে এই বিষয়টা সামনে আনা হয়েছে, এই কারণে যে, অলচিকি এই লিপির অন্তর্গত বলে বা এই লিপি থেকে সংগৃহীত বলে বর্ণ বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। তাহলে এর যে নিয়ম কানুন সেটা অলচিকি অনুসৃত হবে?
প্রথম বিষয়ঃ
কিন্তু অলচিকি এর ধারে কাছে নাই। যেমন বাংলা লিপি, যা শব্দীয় বর্ণমালা লিপি। ব্রাহ্মী লিপির অন্তর্গত সিদ্ধং
লিপি থেকে আগত। এর
নিয়ম কানুন গুলো এক নজরে দেখি।
" যখন কোনো স্বরবর্ণ শব্দ বা শব্দাংশের প্রথমে বসে অথবা অন্য কোন স্বরবর্ণের পরে বসে, তখন তাকে আলাদা বর্ণ হিসেবে লেখা হয়। কিন্তু কোনো স্বরবর্ণ কোনো ব্যঞ্জনবর্ণের পরে বসলে, তখন নির্দিষ্ট চিহ্ন (বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন) দিয়ে একে প্রকাশ করা হয়। এই চিহ্নকে কার বলা হয়। যেমন, ক ব্যঞ্জনবর্ণের পরে এ স্বরবর্ণ বসলে তখন ে চিহ্ন বা এ-কার ব্যবহৃত হয়ে কে লেখা হয়।"
দ্বিতীয় বিষয়ঃ
অলচিকি বর্ণমালায় একটি ধ্বনিকেই ২টি পৃথক অক্ষর দ্বারা এবং ২টি পৃথক ধ্বনিকে একটিমাত্র অক্ষর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে যা ভাষাবিজ্ঞান বা ধ্বনিবিদ্যাসম্মত নয়।
এই রকম অনেক কিছু আছে, যা কোন বৈজ্ঞানিক থিওরি অলচিকি অনুসরণ করে না।
এ রকম জিনিষ কারা ভালভাবে শিখতে পারবে?
যারা কম জানে।
সব উলটা পাল্টা। যেমন ঃ লিখবেন - উদাআকা, উচ্চারণ করবেন - দাকা। অলচিকি আলারা, এই উচ্চারণ এর উদাহরণ দিলে গ্রামের অশিক্ষিত মানুষের মত, ইংরেজি Put এবং But এর উদাহরণ আনে। কেন এমন উদাহরণ দিলাম? অক্ষরের নামের সাথে উচ্চারণ জড়িত না হওয়াটা অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। এটা ছোট বাচ্চাদের মানুষিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত করে, এ বিষয়ে পরের প্রবন্ধে আলোচনা করবো।
শিক্ষার অভাব কতটুকু একটু চিন্তা করলে পাবেন। প্রথমত - ইংরেজি অক্ষর আবুজিদা নয়, তাই তার উচ্চারণ ধারাকে উদাহরণ হিসাবে ব্যাবহার করা চরম বোকামি।
put ( pʰʊt]) এর মধ্যে aspiration প্রাথমিক ব্যঞ্জনবর্ণ আছে, মুখ দিয়ে ধরে বাতাস ছেড়ে দেয়া। কিন্তু But [bʌt] এর মধ্যে স্বরনালির শব্দ আছে বা স্বর শব্দ সম্বলিত ব্যঞ্জনবর্ণ আছে, কণ্ঠ নালি থেকে শব্দ বেরিয়ে আসে।- এ গুলোকে বলে বৈজ্ঞানিক।
অলচিকির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নাই। গ্রামারের যে বিষয়গুলো চিহ্নিত করা হয়েছে,- তা অবৈজ্ঞানিক, ঝাড় ফুক মার্কা। A Framework for Learning and Understanding Santali in Ol Chiki Script লেখনীতে noun, pronoun, verb, sentence ইত্যাদি দিয়ে ১১১ পৃষ্ঠা পূর্ণ করা হয়েছে।
লেখনী ও উচ্চারণের প্রাণ - ধ্বনি তত্ত্ব নিয়ে গোঁজামিল ছাড়া কিছুই নাই।
অলচিকি ছোট বাচ্চাকে রূপকথা শেখানোর বুলি মাত্র। শিক্ষিত ও বড়দের জন্যে এটা সত্যিই বেমানান।
ছোট ছোট ভাগে ব্যকরনগতও লেখা এবং উচ্চারণ করা। যেমন - চায়নিজ
দলমাত্রিক বা Syllabic
স্বর অনুযায়ী ভাগ করে উচ্চারণ করা, যেমন - জাপানিজ কানা। ওয়া + টার = ওয়াটার
আবুজিদা
এটাও phoneme তবে ( ব্যঞ্জনবর্ণ + স্বরবর্ণ), যেমন - দেবনাগরী। তবে এর অনেক রকম ভেদ আছে, ইন্ডিক অক্ষরগুলো যেমন - উত্তর ইন্ডিক ও দক্ষিণ ইন্ডিক এঁর মধ্যে পার্থক্য আছে। এই ইন্ডিক লিপি গুলিকে ব্রাহ্মী লিপি বলা হয়।
শব্দাংশের মধ্যে নির্দিষ্ট স্বরবর্ণ আছে, এর জন্যে কিছু ডাইক্রেটিক স্বরবর্ণ ব্যাবহার করা হয়। যেহেতু ব্রাহ্মী লিপির অন্তর্গত অনেক লিপি আছে, তাই এর অনেক রকম ভেদ আছে।
এখানে এই বিষয়টা সামনে আনা হয়েছে, এই কারণে যে, অলচিকি এই লিপির অন্তর্গত বলে বা এই লিপি থেকে সংগৃহীত বলে বর্ণ বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। তাহলে এর যে নিয়ম কানুন সেটা অলচিকি অনুসৃত হবে?
প্রথম বিষয়ঃ
কিন্তু অলচিকি এর ধারে কাছে নাই। যেমন বাংলা লিপি, যা শব্দীয় বর্ণমালা লিপি। ব্রাহ্মী লিপির অন্তর্গত সিদ্ধং
2012 |
" যখন কোনো স্বরবর্ণ শব্দ বা শব্দাংশের প্রথমে বসে অথবা অন্য কোন স্বরবর্ণের পরে বসে, তখন তাকে আলাদা বর্ণ হিসেবে লেখা হয়। কিন্তু কোনো স্বরবর্ণ কোনো ব্যঞ্জনবর্ণের পরে বসলে, তখন নির্দিষ্ট চিহ্ন (বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন) দিয়ে একে প্রকাশ করা হয়। এই চিহ্নকে কার বলা হয়। যেমন, ক ব্যঞ্জনবর্ণের পরে এ স্বরবর্ণ বসলে তখন ে চিহ্ন বা এ-কার ব্যবহৃত হয়ে কে লেখা হয়।"
দ্বিতীয় বিষয়ঃ
অলচিকি বর্ণমালায় একটি ধ্বনিকেই ২টি পৃথক অক্ষর দ্বারা এবং ২টি পৃথক ধ্বনিকে একটিমাত্র অক্ষর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে যা ভাষাবিজ্ঞান বা ধ্বনিবিদ্যাসম্মত নয়।
এই রকম অনেক কিছু আছে, যা কোন বৈজ্ঞানিক থিওরি অলচিকি অনুসরণ করে না।
এ রকম জিনিষ কারা ভালভাবে শিখতে পারবে?
যারা কম জানে।
সব উলটা পাল্টা। যেমন ঃ লিখবেন - উদাআকা, উচ্চারণ করবেন - দাকা। অলচিকি আলারা, এই উচ্চারণ এর উদাহরণ দিলে গ্রামের অশিক্ষিত মানুষের মত, ইংরেজি Put এবং But এর উদাহরণ আনে। কেন এমন উদাহরণ দিলাম? অক্ষরের নামের সাথে উচ্চারণ জড়িত না হওয়াটা অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। এটা ছোট বাচ্চাদের মানুষিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত করে, এ বিষয়ে পরের প্রবন্ধে আলোচনা করবো।
শিক্ষার অভাব কতটুকু একটু চিন্তা করলে পাবেন। প্রথমত - ইংরেজি অক্ষর আবুজিদা নয়, তাই তার উচ্চারণ ধারাকে উদাহরণ হিসাবে ব্যাবহার করা চরম বোকামি।
put ( pʰʊt]) এর মধ্যে aspiration প্রাথমিক ব্যঞ্জনবর্ণ আছে, মুখ দিয়ে ধরে বাতাস ছেড়ে দেয়া। কিন্তু But [bʌt] এর মধ্যে স্বরনালির শব্দ আছে বা স্বর শব্দ সম্বলিত ব্যঞ্জনবর্ণ আছে, কণ্ঠ নালি থেকে শব্দ বেরিয়ে আসে।- এ গুলোকে বলে বৈজ্ঞানিক।
অলচিকির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নাই। গ্রামারের যে বিষয়গুলো চিহ্নিত করা হয়েছে,- তা অবৈজ্ঞানিক, ঝাড় ফুক মার্কা। A Framework for Learning and Understanding Santali in Ol Chiki Script লেখনীতে noun, pronoun, verb, sentence ইত্যাদি দিয়ে ১১১ পৃষ্ঠা পূর্ণ করা হয়েছে।
লেখনী ও উচ্চারণের প্রাণ - ধ্বনি তত্ত্ব নিয়ে গোঁজামিল ছাড়া কিছুই নাই।
অলচিকি ছোট বাচ্চাকে রূপকথা শেখানোর বুলি মাত্র। শিক্ষিত ও বড়দের জন্যে এটা সত্যিই বেমানান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন