বন্দি ফ্রেমে স্মৃতির হাতছানি (পর্ব-1)
144/ডি মনিপুরী পাড়া, জর্জ দা সেখানে থাকেন। সবেমাত্র ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রীর এপিএস হিসাবে জয়েন্ট করেছেন। আমি, প্রনয় 183 তেজকুনিপাড়ায় উঠেছি,সাথে মুক্তদা আর মার্শেল মামা (যাকে আদর করে ডাকতাম পাগলা মামা বলে) মার্শেল মামা নেই, খুব অবেলায় আমাদের ছেড়ে চলে গেল, একটি তরতাজা তরুন অকালেই ঝরে গেল। মার্শেল মামা আমাদের স্মৃতিতে আছে। সুশীলার সাথে বিয়ের সময় আমি গিয়েছিলাম, মামার বিয়েতে প্রচন্ড আনন্দ করেছি, মনে হয়েছে আমার নিজের মামার বিয়েতে আমি এসেছি। সেদিন সুশীলার চোথে মুথে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছিল আজ তার চোথে বরফ জমাট অশ্রুরাশি। সুশীলা আমাদের সহযাত্রি ছিল। আমরা তাকে পেয়েছিলাম আমাদের যাত্রার শুরুতে, যখন আমরা ভেবেছি, আমাদের একতাবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। আমি, ডেনিস দা ও লরেন্সের আশ্রয়ে ডন বস্কো হোস্টেলে গেষ্ট হিসাবে এসেছি। ইফা মামা, প্রনয়, নেলশনরা পাশের আর একটি হোস্টেল আত্ম-অন্বেষনে থাকে। কারণে ও কারনে জর্জদার কাছে পড়ে থাকা টা যেন আমাদের নিয়মিত রুটিন ছিল। সবাই ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ব্যস্ত, তখন আমি মেডিক্যালের ওয়েন্টিং লিস্টের দিকে হা মেলে তাকিয়ে আছি, যদি আদিবাসি হিসাবে চান্স পাই! ইতিমধ্যে ডেনিস দা, লিনুস কাকারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গনযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হয়েছে। লরেন্স জোর প্রস্ততি নিচ্ছে একটা ভাল সাবজেক্টে চান্স পাওয়ার জন্য। আমি আর প্রনয় যেন চিন্তার কোন বালা্য় নেই। যা হবার হবে দেখা যাক। আমোস দা, ফিলিপদা-রা সদরঘাটের ব্যাপ্টিস হোস্টেল থেকে মাঝে মাঝে হানা দেয়। আমি আর প্রনয় যখন তেজকুনিপাড়ায়, তখন একটি পাহাড়সম স্বপ্নের সুচনা হয়েছিল। ঢাকায় আমাদের প্রথম বাসস্থান । আমাদের স্মৃতিগুলো আজ বড়ো অসহায়। ভোর থেকে রাত অবধি কি ভাবে যে কেটে যেত! আজ শুধু ই ভাবি। একদিন, সকালে সুর্যটা প্রথর ছিল কিনা জানি না। সেদিন আকাশে এক টুকরো মেঘ ভাসছিল কিনা তাও জানি না। তবে মনের মাঝে বিরাট একটি স্বপ্ন জেগে উঠেছিল। মার্শেল মামাকে বললাম। মামা বললেন, খু্ব ভাল কথা বলেছিস ভাগ্নে, কাজে লেগে পড়ি। ডেনিসদা কে বলা হলো, ডেনিসদা রাজি, ইফা মামাকে বলা হলো, আমোস, ফিলিপদাদের জানানো হলো। দিন ঠিক করা হলো। দিনটির ঠিক বিকালে বসলাম আমরা, আমাদের 183 তেজকুনিপাড়ায়। সিদ্ধান্ত হলো আমরা একটি সান্তাল ছাত্র সংগঠন করবো। আমি প্রস্তাব করলাম সান্তাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (সাসু), নামটি নেয়া হল, আরও কয়েকটি নাম এসেছিল তার মধ্যে থেকে এই নামটি গ্রহন করা হলো। (আমি এক সময় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী ছিলাম, ছাত্র রাজনীতি আর রাজনীতি নামক অসার বিষয়টির সাথে আমার সখ্যতা গড়ে উঠেছিল, তারপর অবশ্য বর্জুয়া শ্রেণীর ছাতার তলে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। আমার মনে হয় বাংলাদেশে প্রথম আমিই ছিলাম, যে কিনা একটি কলেজের বৃহৎ রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের একটি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিল, পরবর্তিতে থানা শাখার যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও জেলা শাখার সদস্য এবং সান্তাল ছাত্র হিসাবে আমিই মনে হয় বাংলাদেশে প্রথম, যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এজিএস পদে প্রতিদ্বন্দিতা করেছিলাম কিন্তু হেরে গিয়েছিলাম। আজ আমি রাজনীতিকে পছন্দ করি না। আমি নিরপেক্ষ থাকার মন্ত্র শিখেছি এবং ভাল আছি। সেদিন আহবায়ক কমিটি গঠন করা হলো, আহবায়ক কমিটির সভাপতি আমোস মূর্মূ, ডেনিসদা, ইফা, আমি, লরেন্স, প্রনয়, মার্শেল, মুক্ত, নেলশন আরো বেশ কয়েকজন ছিল। শুরু হলো একটি স্বপ্নের পথচলা। শুরু হলো ঢাকায় প্রথম সান্তাল ছাত্র-ছাত্রীদের সংগঠন। (চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন