সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Ai-কে প্রশ্ন করেছিলাম "বাংলাদেশের সান্তালরা কি জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী আদিবাসী হিসেবে বিবেচিত?"


হ্যাঁ, বাংলাদেশের সান্তাল জনগোষ্ঠীকে আন্তর্জাতিক মান, বিশেষ করে জাতিসংঘের আদিবাসী জনগণের অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণা (UNDRIP) অনুযায়ী আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।  বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের সমতলভূমিতে বসবাসরত সান্তাল সম্প্রদায় আন্তর্জাতিক আইনে আদিবাসী জনগণের সংজ্ঞার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বহন করে।

জাতিসংঘ ঘোষণার অধীনে সান্তাল জনগোষ্ঠীর স্বীকৃতির মূল পয়েন্টগুলো:

  1. স্ব-পরিচয়
    আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো স্ব-পরিচয়। সান্তাল জনগোষ্ঠী নিজেদের আদিবাসী (আদিবাসী) হিসেবে পরিচয় দেয় এবং তাদের একটি স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক, ভাষাগত এবং ঐতিহাসিক পরিচয় রয়েছে।

  2. স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিচয়
    সান্তালদের নিজস্ব ভাষা (সান্তালি), রীতি-নীতি, ঐতিহ্য এবং সামাজিক কাঠামো রয়েছে যা মূলধারার বাঙালি জনগোষ্ঠীর থেকে আলাদা। তারা এমন সাংস্কৃতিক চর্চা ধরে রেখেছে যা তাদের ভূমি ও পরিবেশের সাথে গভীরভাবে যুক্ত।

  3. ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা
    আদিবাসী জনগোষ্ঠী সাধারণত এমন জনগোষ্ঠীর বংশধর হিসেবে বিবেচিত হয় যারা আধুনিক জাতিরাষ্ট্র বা বসতি স্থাপনকারীদের আগমনের পূর্বে কোনো অঞ্চলে বাস করত। সান্তাল জনগোষ্ঠীর বাংলা অঞ্চলে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে যা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার আগেই বিদ্যমান ছিল।

  4. প্রান্তিককরণ ও বাস্তুচ্যুতি
    অন্যান্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মতো, সান্তালরা ইতিহাসজুড়ে প্রান্তিককরণ, ভূমি থেকে উচ্ছেদ এবং অর্থনৈতিক-সামাজিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এটি আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যেটি তাদের ভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিচয়ের কারণে ঘটে।

  5. প্রধানধারার জাতীয় সমাজে পূর্ণ সংহতি না থাকা
    সান্তালরা মূলধারার বাঙালি সংস্কৃতি থেকে পৃথক একটি পরিচয় ধরে রেখেছে এবং অনেকেই এখনো এমন সম্প্রদায়ে বসবাস করেন যেখানে ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা, বিশেষত কৃষিকাজ, কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। তারা ঐতিহাসিকভাবে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থায় কম প্রতিনিধিত্ব পেয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী আদিবাসী জনগণের সাধারণ বৈশিষ্ট্য।

জাতিসংঘের আদিবাসী জনগণের সংজ্ঞা:

যদিও জাতিসংঘ আদিবাসী জনগণের জন্য নির্দিষ্ট সংজ্ঞা প্রদান করে না, তারা স্ব-পরিচয়, স্বতন্ত্র সংস্কৃতি, ভাষা, নির্দিষ্ট অঞ্চলের সাথে ঐতিহাসিক সংযোগ, এবং প্রান্তিককরণ বা বঞ্চনার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আদিবাসী জনগণকে স্বীকৃতি দেয়। সান্তাল জনগোষ্ঠী এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলে যায়।

বাংলাদেশ সরকার কখনো কখনো কিছু গোষ্ঠীকে আনুষ্ঠানিকভাবে আদিবাসী (আদিবাসী) হিসেবে স্বীকৃতি দিতে দ্বিধা প্রকাশ করেছে এবং এর পরিবর্তে "ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী" বা "ছোট জাতিগত গোষ্ঠী" শব্দগুলো ব্যবহার করতে চায়। তবে, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সান্তালসহ বাংলাদেশের অন্যান্য আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোকে আদিবাসী জনগণ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

উপসংহার:

জাতিসংঘের আদিবাসী জনগণের অধিকার সংক্রান্ত ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের সান্তাল জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, যা তাদের স্ব-পরিচয়, স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক পরিচয়, এবং প্রান্তিককরণের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে।



কোন মন্তব্য নেই:

About

Ghonokuasha Baskey is a Santal writer of Bangladesh. He has started writing since 1985.