প্রতিক্রিয়া: কী হবে সাঁওতালি বর্ণমালা by Samar M Soren
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-02-06/news/327005Sorry, May be comments are not posted and Again I have tried to post the edited comments on the Daily Prothom Alo. For my readers, here I post my comments:
অসংখ্য ধন্যবাদ সমর এম সরেনকে। এই রকম একটা পরিস্থিতিতে সমর এম সরেন- এর লেখা, আমাদের মনের আকুতি প্রকাশ পেয়েছে, প্রকাশ পেয়েছে আমাদের হৃদয়ের কথা। সমর এম সরেন- এর প্রতিক্রিয়া অনেক বিষয়গুলোকে পরিস্কার করেছে।
গত ০৩/০২/২০১৩ ইং এ প্রথম আলো’র উপসম্পাদকীয়তে পাভেল পার্থ-এর (সাঁওতালি ভাষার বর্ণমালা কী হবে?) লেখার কিছু দিক সমর এম সরেন- এর লেখার সাথে যুক্ত করতে চাই।
পাভেল পার্থ- এর লেখা এবং বাস্তবতা:
১। মিথ্যে: “রাজশাহীতে শুরু হয় সাঁওতালি ভাষার প্রথম বেসরকারি বিদ্যালয়।”
সত্যটি সমর এম সরেন- এর লেখায় প্রকাশিত হয়েছে।
২ । মিথ্যে: “ভারতে সাঁওতালি ভাষা ও অলচিকি বর্ণমালার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিললেও বাংলাদেশে এখনো আদিবাসী জনগণের সাংবিধানিক স্বীকৃতিই মেলেনি।”
সত্যটি হলো: সান্তালি ভাষা ভারতের সংবিধানে অষ্টম ভাষা হিসেবে সংযোজিত হয়েছে। কিন্তু বর্ণমালার বিষয়ে কেন্দ্রিয় সরকার কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি। তবে কোন কোন রাজ্যে রাজনৈতিক চাপের মুখে অলচিকি বর্ণমালাকে সান্তালি বর্ণমালা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
৩ । মিথ্যে: “বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত সাঁওতাল সম্প্রদায় সাঁওতালি ভাষা রোমান হরফে লেখার পক্ষে নয়।”
এই উক্তি সঠিক নয় এবং লেখকের উক্তি থেকেই প্রকাশিত হয়। লক্ষ্য করুন, “বাংলাদিশোম সান্তাল বাইসি, আদিবাসী মুক্তি মোর্চা, সান্তাল ল্যাংগুয়েজ ডেভেলপমেন্ট কমিটি ও মাহালে ল্যাংগুয়েজ ডেভেলপমেন্ট কমিটি সম্প্রতি রাজশাহী ও দিনাজপুরে কর্মশালা ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রোমান হরফে সাঁওতালি ভাষার পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের দাবি তুলেছে (সূত্র: প্রথম আলো, ২৩.১২.২০১২)।”
উপরোক্ত যে কয়টি সংগঠনের নাম লেখা হয়েছে, এই সংগঠনগুলো সান্তাল জনগোষ্টির এবং রীতিমত সভা সেমিনার করে, সাংবাদিক সম্মেলণের মাধ্যমে সিদ্ধান্তগুলো দেশবাসিকে জানিয়েছে।
৪ । অলচিকি নিয়ে লেখকের অজ্ঞতা এবং বাস্তবতা:
ক) ১৯২৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অলচিকি নিয়ে তুমুল সমালোচনা ও তর্কযুদ্ধ হচ্ছে। দীর্ঘ এ সময়ে তর্ক যুদ্ধের কোন যুৎসই সমাধান হয়নি। কারণ কী? কারণটি স্বাভাবিক ভাবেই অনুমান করা যায়, অলচিকি’র মধ্যে গুরুতর সমস্যা রয়েছে, যার জন্য এখন পর্যন্ত সেই সমস্যার সমাধান হয়নি।
খ) অলচিকি বর্ণমালাকে ভারতের অভ্যন্তরিন রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের কারণে, তা প্রায়ই তীব্র সমালোচনার সম্মুখিন হচ্ছে।
গ) “১৯২৫ সালেই পণ্ডিত রঘুনাথ মুরমু অলচিকি নামে সাঁওতালি বর্ণমালা উদ্ভাবন করে এসব বিতর্ক ও সমস্যার বৈজ্ঞানিক নজির হাজির করেন।”
সত্যটি: লেখক এক পেশে তথ্যের অবতারনা করে গেছেন। কিন্তু অলচিকি সম্বদ্ধে সেদেশের বাস্তবতা ও সঠিক দিকটি হচ্ছে।
“The alphabet was designed for a southern dialect of Santali spoken in the Mayurbhanj district of the Indian state of Orissa. এই বিষয়টি সমস্যার মুল কারণ।
ঙ) অলচিকি বর্ণমালায় কিছু অক্ষর রয়েছে, যা দেখতে প্রায় একই রকম। যার জন্য এই অক্ষরগুলো মনে রাখা খুব কঠিন।
চ) অলচিকির সবচেয়ে বড় দূর্বল দিক হচ্ছে, এর উচ্চারণ। যেহেতু অলচিকি অক্ষরমালা আঞ্চলিক ভাষা থেকে এসেছে, তাই এর উচ্চারণ সঠিক সান্তালি থেকে আলাদা। যেমন: Cedaḱ এর সান্তালি মানে ‘কেন’ , যদি এটিকে অলচিকি বর্ণমালায় লিখি সেটি হবে ‘চেদাগ’। এ রকম অসংখ্য সান্তালি শব্দ আছে, যা অলচিকি অক্ষরমালা দিয়ে সঠিকভাবে উচ্চারণ করা সম্ভব না।
আরও কিছু উদাহরণ, যেমন: Ḍaṅ, Ḍạn, Ḍạṅ. Kuṛikin daḱkin LOLOKANA এ রকম হাজারো শব্দ আছে অলচিকিতে সঠিক উচ্চারণে লিখতে পারবেন না। এছাড়াও সান্তালি ভাষার যে অপরুপ সৌন্দর্য্য aḱ, ać, at́, aṕ সংযুক্তি শব্দের মধ্যে লুকিয়ে আছে, তা বাংলাতে তো সম্ভবই নয়, অলচিকিতেও ১০০ শত ভাগ সঠিক উচ্চারণে লেখা যায় না। বর্তমানে অলচিকিতে চেক্ট কনসোনেন্ট নিয়ে গবেষণা চলছে।
ছ) সব মিলিয়ে অলচিকি’র প্রায় ৫০ টি অক্ষরমালা রয়েছে, যা মনে রাখা এবং শেখার জন্য অনেক শ্রম সাধ্য।
জ) অলচিকি লেখা ও পড়ার জন্য প্রচুর প্রশিক্ষনের প্রয়োজন হয়। যার জন্য ভারতের বর্তমান কেন্দ্রিয় সরকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে, অলচিকি গবেষণা, উন্নয়ন এবং প্রশিক্ষনের। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর উন্নয়নের কোন ফলাফল প্রকাশিত হয়নি।
উপরোক্ত কারণগুলোর জন্য অলচিকি বর্ণমালা বাংলাদেশের জন্য এই মুহুর্তে প্রয়োগ করা সঠিক হবে না।
৫ । লেখক বাংলা অক্ষরমালায় সান্তালি ভাষা শেখানোর পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন। এ প্রসঙ্গে লেখক কিছু আবেগগত বিষয়ের অবতারণা করেছেন। শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা ভাষা নিয়ে আমাদেরও আবেগের কমতি নেই। আমরা বাংলাকে ভালবাসি এবং শ্রদ্ধা করি শহীদদের। কিন্তু আমার ভাষা লেখার জন্য বাংলা অক্ষরমালা কতটুকু যৌক্তিক সেই বিষয়ে ভাববার অবকাশ রয়েছে। বাংলা অক্ষরমালার অযাযিত বর্ণ ব্যবহার যেমন আমার বাংলা ভাষার সৌন্দর্য্যকে নষ্ট করবে, তেমনি আমার ভাষার উচ্চারণের সৌন্দর্য্যকেও বিলিন করে দেবে। কিছু উদাহরণ বিবেচনা করুন:
বাংলা অক্ষরমালায় সমস্যাগুলো:
১ । ‘ শিকারিয়ৗ’ এই শব্দটা সান্তালি ভাষার সহজ শব্দ কিন্তু এখানেও উচ্চারণের বিকৃতি ঘটেছে। রোমানে দেখুন- Sikạriạ ‘ ạ’ এর উচ্চারণ বাংলায় ‘য়ৗ’ হবে না নিশ্চয়।
২ । ইঞ কি Iń হতে পারে? ঞ এর উচ্চারণ ń মত হবে? কোন বাংলা ভাষাভাষিকে ইঞ উচ্চারণ করতে বললে তিনি সান্তালি’র সঠিক উচ্চারণ করতে পারবেন না। এ রকম সান্তালি ভাষায় অনেক শব্দ আছে, যা স্বাভাবিক বাংলা অক্ষরমালায় উচ্চারণ করা সম্ভব নয়। যেহেতু সান্তালি ভাষার একটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, নাক দিয়ে অনেক শব্দ উচ্চারণ করতে হয়। আর বাংলা ভাষায় নাক দিয়ে উচ্চারণ করার জন্য. ঁ, ন, ঞ, ং, ঙ …এ রকম অক্ষর রয়েছে। তবে এখানে লক্ষনীয় যে, বাংলা ভাষার নাসিকা বর্ণ এবং সান্তালি ভাষার নাসিকা উচ্চারণের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। তাই ń, ṅ, এর সমার্থক বাংলা অক্ষর মালা বানাতে হলে বাংলা ভাষাকে বিকৃত করে বানাতে হবে।
এছাড়া, সান্তালি ভাষার আর একটি দিক রয়েছে, যেটা অর্ধ উচ্চারিত শব্দ। যেমন, ḱ, t́, ć, এ রকম সংযুক্তি শব্দগুলোর বিরাট সমাহার সান্তালি ভাষার মধ্যে রয়েছে। কিন্তু বাংলা ভাষার ক্, ত্, চ্ বা অন্য কোন ভাবে উচ্চারণ করা সম্ভব নয়। এখানেও বাংলা অক্ষরমালাকে বিকৃত করে ব্যবহার করতে হবে।
রোমান অক্ষরমালায় সান্তালি ভাষা লিখতে, পড়তে কোন সমস্যা হচ্ছে না। তাহলে নিশ্চয় সান্তাল শিশুদেরকে লেখাপড়া শেখানোর ক্ষেত্রেও অসুবিধা হবে না। রোমান অক্ষরমালায় উচ্চারণের সমস্যা নেই, দীর্ঘদিন ধরে রোমান অক্ষরমালার সাথে কিছু চিহ্ন ব্যবহৃত হওয়ার ফলে এখন তা সান্তালি বর্ণমালাতে রুপান্তরিত হয়েছে। ফলে, এই বর্ণমালায় আমি আমার মায়ের ভাষার স্বাদ পাই, বিকৃত হয় না। তাই রোমান বর্ণমালায় সান্তালি ভাষা শেখানোর দীর্ঘদিনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার অনুরোধ জানাচিছ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন