মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৭

৪:০৭:০০ PM

দিশার কিনারা

মায়াবী রাতের জোছনায়
হিমধরা তেত্রিশ বসন্তের ঝড়,
মনের জানালা ভেঙ্গে, পালাতে চায়
দুমড়ে মুচড়ে  দিতে চায় -
আমাকে আর আমার আমিকে। 
 
সবাক সন্ধিক্ষণে, 
কোন পোড় বাড়ির ছাদের তলে,
ভাঙ্গা দেয়াল ঘেঁষে,
চাঁদটা যখন উঁকি দেয়- 
তখন দিশার কূলকিনারা,
বাতাসের শব্দে,
মাতোয়ারা আঙিনা।

ঝিঁঝিঁপোকার ঝিঝি ডাক, 
মিলিয়ে যায় বাতাসে, 
হারায় দিশার কূলকিনারা,
পাগলের উন্মদনায়,
ভেসে উঠে আর একটি মানব। 

ভেঙ্গে দিতে চায় তোমাকে,
তোমার শত বছরের লালায়িত
 ফুলের বাসরকে, 
উপরে উপরে সুগন্ধ,  
বাতাসকে করে মধুময়, 
আমাকে করে মোহিত, 
মিথ্যে বাসার তলে, 
ফানুস নৌকায় চেপে,
যাবে কতদূর?
ঠিকানা তো তোমার আমার একটাই।

রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৭

১:৪৩:০০ PM

সুখ সদন

ক্লান্ত মনে, কেন এই আলোড়ন? 
ক্লান্ত হৃদয়, চায় একটু অবসান। 
 ক্লান্ত আশা, দেখেনা স্বপন।
ক্লান্ত পথিক, খোঁজে না আশ্রম।


 দু চোখের নীলিমায়, 
যত টুকু প্রতীক্ষা, 
সব টুকু তোমায় দিলাম,
 তবু হও যদি অনামিকা।

আমার ভ্রান্ত খাঁজে, 
বক্রতার মাঝে, 
সুধা লালায়িত অমৃতে, 
 সুখ সদনে আমি,
 রাখবো তোমায় যতনে। 

 চৌচির চৌকোঠায়, 
 নিত্য আসে নিত্য যায়, 
 কোন বাধনের বাহানায়,
 সেকল শুধু ছিঁড়ে যায়। 

 অমৃতের সুধা মেখে,
 শিশির ভেজা গোলাপে, 
 গন্ধরাসে বন্ধ বাসে, 
সুখ বিষে নিত্য মনে।

বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

১২:৩১:০০ PM

সাঁওতালরা (সান্তালরা) কি পাগান ধর্মের অনুসারী?

সান্তালদের ধর্মের উৎস কি? আগের প্রবন্ধে আমরা সান্তালদের "বেদীন" নাম ডিকশনারিতে পেয়েছিলাম এবং সেখানে দেখেছিলাম যারা খ্রিস্টান, ইহুদি এবং ইসলাম ধর্ম পালন করে না, তাদের "বেদীন" বলা হয়েছে।  বর্বর, অসভ্য, ধর্মহীন শব্দগুলোর বিপরীতে খোজার চেষ্টা করছিলাম, কেন সান্তালদের "বেদীন" নামে অভিহিত করা হলো? এর সূত্র ধরেই আমরা সেখান থেকে পাগান নামক  শব্দ পেয়েছিলাম এবং এখানে  আমরা  খুঁজবো সান্তালরা কি পাগান ধর্মের অনুসারী? এখানে বেদীন সান্তালদেরকে  "সাঁওতাল" বলে উল্লেখ করছি, কারণ তারা নিজেদেরকে "সাঁওতাল" বলে পরিচয় দিতে ভালবাসে।

সাঁওতালরা পুজো করছে
পাগান ধর্ম কি? 
ইংরেজি ভাষায় প্যাগানিজম শব্দটি, লাতিন পেগানাস থেকে এই পাগান শব্দটি এসেছে। যারা প্যাগানিজম এর  অনুশীলন করে তাদের পাগান বলে চিহ্নিত করে।  বা যারা পাগান ধর্মের অনুসারে ধর্মচারণ করে তাদের ধর্মকে প্যাগানিজম বলা হয়। 

 প্যাগানিজমকে উইকিপিডিয়াতে এভাবে বর্ণনা করে  "যার অর্থ খ্রিস্টীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে দাঁড়ায় কোন অ-আব্রাহামীয় ধর্মের কিছু আত্মিক ও সামাজিক আচার ও বিশ্বাস। মূর্তিপূজা বা প্রতিমাপূজা প্যাগানিজমের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য|
এটি মূলত একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, গ্রেকো রোমান বহুদেববাদ হিসেবে ইউরোপ এবং উত্তর আফ্রিকার খ্রিস্টান ধর্মের প্রসারের আগে বহু ঈশ্বরবাদী ঐতিহ্যে ব্যবহার করা হয়। ব্যাপক অর্থে, প্রসারিত সমকালীন ধর্মগুলোতে এটি অধিকাংশ পূর্বাঞ্চলীয় ধর্ম এবং আমেরিকা, মধ্য এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার আদিবাসী ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত; এবং সেইসাথে সাধারণভাবে অ-আব্রাহামিক লোকধর্মকেও এটির অন্তর্ভুক্ত করা হয়।" 

উপরের বর্ণনা অনুযায়ী সাঁওতালদের  ধর্ম বিশ্বাসের সাথে পুরোপুরি মিলে না, যদিও আফ্রিকার আদিবাসীদের ঐতিহ্যের সাথে একে অন্তর্ভুক্ত করে। কারণ সাঁওতালরা  এক ঈশ্বরবাদ বা একজন সৃষ্টিকর্তা আছে এমন বিশ্বাস করে। পক্ষান্তরে সাঁওতালদের পৌরনিক কাহিনীর মধ্যে এমন  কিছু বিষয় রয়েছে যে গুলো আমাদের নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে, যা পরে আমরা বিবেচনা করব। তার আগে প্যাগানিজম বিষয়টা ভালভাবে বোঝার চেষ্টা করি। 

আগের প্রবন্ধে  Marriam Webster  ডিকশনারি থেকে Heathen/s এর সংজ্ঞা দেখেছিলাম। এবার আসুন ঐ একই
ডিকশনারি থেকে Pagan বা paganism  এর সংজ্ঞা লক্ষ্য করি ঃ
1. :  heathen 1; especially :  a follower of a polytheistic religion (as in ancient Rome)
2. :  one who has little or no religion and who delights in sensual pleasures and material goods :  an irreligious or hedonistic person
3.
:  neo-pagan witches, druids, goddess worshippers, and other pagans in America today — Alice Dowd  

১নং এবং ৩ নং সাঁওতালদের সাথে পুরোপুরি মেলা না, তবে ২নং বিষয়ের সাথে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করি। 

যার সামান্য বা কোন ধর্মীয় কার্যক্রম নাই
সাঁওতালদের  ধর্মীয় কার্যক্রম প্রাত্যহিক না, বরং বিভিন্ন সময়ের সাথে সম্পর্ক যুক্ত, বলা যায় বিভিন্ন উৎসবের সময় ধর্মীয় আচার আচরণ গুলো করে থাকে। এই জন্যে সাঁওতালদের  ধর্মকে সামান্য ধর্ম পালনকারীদের মধ্যে রাখা যায়।  কোন কোন গবেষক মনে করেন যে, সাঁওতালদের উৎসবগুলোই এক সময় ধর্মে রূপান্তরিত হয়েছে।

চিত্ত বিনোদন প্রিয় ও বস্তুবাদীতা 
হ্যাঁ সাঁওতালদের  জীবন যাত্রার মধ্যে যদি একটি লক্ষ্য করেন, তাহলে প্রতিটা সাঁওতালদের মধ্যে বিনোদন বিষয়টা লক্ষ্য করবেন, হোক সেটা Doṅ Sogoy কিংবা  যেকোন উৎসবে তারা প্রচণ্ড ভাবে বিনোদন প্রিয়।  এক কথায় বলতে গেলে সাঁওতালরা আমোদপ্রিয় জাতি।  

অধার্মিক ও আনন্দবাদী মানুষ 

এখানে অধার্মিক মানে কি? ঐ একই ডিকশনারি  বলে :  neglectful of religion :  lacking religious emotions, doctrines, or practices ধর্মের তাচ্ছিল্যতা: ধর্মীয় আবেগের অভাব, তত্ত্বগুলোর, অথবা চর্চায় উদাসীন। George Bernard Shaw বলেন so irreligious that they exploit popular religion for professional purposes আমরা এখানে জোরালো ভাবে not believing in or practicing any religion এই লাইনগুলো সংগ্রহ করি এবং ভাবার চেষ্টা করি,  বাক্যগুলো সাঁওতালদের বেলায় প্রয়োগ করা যায় কিনা? একটা বড় কারণ হতে পারে, যেহেতু সাঁওতালরা নিয়মিত বা দৈনন্দিন  ধর্মীয় কার্যক্রম করে না, তাই এদেরকে এ রমকটা বলা যেতে পারে। তবে আর যা কিছু হোক সাঁওতালরা আনন্দবাদী মানুষ, এটা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে।

এখানে একটি কথা বলে রাখা ভাল, আধুনিক পাগানিজম এর অনেক রকম ধরন আছে এবং এর উৎপত্তি প্রাচীন ব্যবিলন থেকে যা পরবর্তী রোমের মাধ্যমে বিকশিত হয়েছে । যেহেতু এখনকার পাগান ধর্মগুলো অনেক কিছুর সংমিশ্রণের  ফলে  একটা অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে, তাই একে খুব সহজে ব্যাখ্যা করা কঠিন। আমরা সাঁওতালদের  ধর্ম কে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছি, এটা পাগানের সাথে সম্পর্কযুক্ত কিনা, কারণ বেদীন শব্দের মানে খুঁজতে গিয়ে আমরা এই পর্যন্ত এসে দাঁড়িয়েছি।

সারসংক্ষেপ আধুনিক পাগান ধর্মকে এভাবে বলতে পারিঃ
  • গঠন ঃ পরম্পরাগত ভাবে চলে আসা বিভিন্ন ধর্মের রীতিনীতি আচার অনুষ্ঠান যা ২০ শতকে এসে বিভিন্ন জাতি এখান থেকে উপাদানগুলো নিয়ে নিজেদের ধর্মের অবয়ব  তৈরি করেছে। 
  • উৎস ঃ পাগান ধর্ম অনেক বৈচিত্র্যের মিলন, এখানে পৌরনিক কাহিনী আছে, ইতিহাস আছে, খ্রিস্টীয় পূর্ব সময়ের বিভিন্ন উৎস থেকে আগত, সাথে সাথে ইউরোপীয় বিভিন্ন সম্প্রদায় থেকে গৃহীত। 
  • অনুসারী ঃ অনেক জটিল কিছুর মিশ্রণের মতই এর মিশ্রণ হওয়ার ফলে, এর অনুসারীদের এককভাবে আলাদা করা কঠিন, তবে পৌত্তলিকতার মধ্যে এদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। 
পাগান এর সংজ্ঞা অনুসারে আমরা একটি ছোট উপসংহারে আসতে পারি, সাঁওতালদের  ধর্ম বিশ্বাস  পাগানের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে বিষয়টির প্রতি আরও পরিষ্কার হওয়ার জন্যে এর চেয়ে আর একটু বেশি কিছু খোজার প্রয়োজন আছে। আর তা হল- সাঁওতালদের পৌরনিক কাহিনীগুলো বিশ্লেষণ করা। এই কাহিনী বিশ্লেষণ আমাদের আরও পরিষ্কার করবে, কেন, কখন থেকে সাঁওতালদের বেদীন  বলা হয়? বা কেন ধর্মহীন বলা হচ্ছে?

 এখানে একটা মজার বিষয় আছে, যা পরবর্তীতে আরও একটু আলোচনা করব, তবে এখানেই এটা বলে রাখা ভাল। তাহলো -

সাঁওতালরা কি হিন্দু ধর্মের অন্তর্গত?
হ্যাঁ, এ রকমটাই মুক্তকোষ উইকিপিডিয়া বলে, "এরা নিজেদেরকে কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ রচিত মহাভারতে বর্ণিত কুরু-পাণ্ডবদের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্যের প্রত্যাখ্যিত-ভাবশিষ্য একলব্যের বংশধর ব'লে বিশ্বাস করে এবং তীরচালনাকালে এখনও নিজেদের বৃদ্ধাঙ্গুল ব্যবহার করে না কারণ তাদের আদিপুরুষ একলব্যকে গুরুদক্ষিণাস্বরূপ নিজের বৃদ্ধাঙ্গুল দান করেছিলেন ।"- কেন এই টানাটানি? সহজ যুক্তিতে আসতে পারি, তাহলো - যখন আপনার কিছু থাকবে না, তখন আপনাকে যে কেউ, যেখানে সেখানে টেনে নিয়ে যাবে- এটাই বাস্তবতা। তবে দীর্ঘদিন থেকে ভারতবর্ষে থাকার দরুন, এখানকার সংস্কৃতির সাথে অনেক কিছুই মিশে গেছে। ধর্মের রীতিনীতির মধ্যেও অনেক কিছু ঢুকে গেছে, যা হিন্দু সংস্কৃতির মধ্যে পাওয়া যায়। যেহেতু সাঁওতালরা বর্তমানে খুব জোর দিয়ে দাবী করছে  যে, তারা প্রাকৃতিক উপাসক, তাই প্রকৃতির বিভিন্ন জিনিষের প্রতি তারা পুজা বা বিশ্বাস রাখে। এখানে একটি মজার বিষয় হল, হিন্দুদের ধর্মীয় গ্রন্থে মূর্তি কিংবা প্রাকৃতিক কোন জিনিষকে পুজা করতে নিষেধ ছিল।

যজুর্বেদ – অধ্যায় ৪০- অনুচ্ছেদ ৯ – [ অন্ধতম প্রভিশান্তি ইয়ে অশম্ভুতি মুপাস্তে – যারা অশম্ভুতির পুজা করে তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। তারা অধিকতর অন্ধকারে পতিত হয় শাম মুর্তির পুজা করে । অশম্ভুতি হল – প্রাকৃতিক বস্তু যেমন- বাতাস,পানি,আগুন । শাম মুর্তি হল – মানুষের তৈরী বস্তু যেমন - চেয়ার ,টেবিল ,মূর্তি ইত্যাদি।]। তাহলে এই পুজা আর্চনা শুরু হল কিভাবে? যেহেতু হিন্দু ধর্ম প্রাচীন ধর্ম, এবং সবার বেদ,গীতা পড়ার অধিকার ছিল না তাই সেই সময়কার কিছু ঋষি মুনির কারনে মুর্তি পুজোর উদ্ভব হয়েছে । ডা. চমনলাল গৌতম তাঁর বিষ্ণুরহস্য বই এর ১৪৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘ঋষিগন মুর্তি পুজার প্রচলন করেছেন॥ খ্রিষ্টীয় ৭ম শতাব্দী হতে বাংলায় কিছু কিছু অঞ্চলে কালী পূজা শুরু হয়॥১৭৬৮ সালে রচিত কাশীনাথের কালী সপর্যাসবিধি গ্রন্থে দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপূজার বিধান পাওয়া যায়। [তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া] "তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকে বাংলায় কালীমূর্তি ও কালীপূজার প্রবর্তক মনে করা হয়।
( তথ্যসূত্রঃ হিন্দুদের দেবদেবী: উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ, তৃতীয় খণ্ড, হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য,কলকাতা, ২০০৭, পৃ. ২৮৫-৮৭)।" 


হিন্দুদের মত দৈনন্দিন জীবনে সাঁওতালদের পূজার প্রচলন নেই, আছে বিভিন্ন  উৎসব কিংবা অনুষ্ঠানে। ফলে এ সিদ্ধান্তে
আধুনিক সাঁওতালরা এ রকম পূজারও প্রচলন করেছে
উপনীত হওয়া সমীচীন যে, হিন্দুদের মধ্যে বসবাস করতে করতে এক সময় এ রকম পূজার প্রচলনগুলো সাঁওতালদের মধ্যে শুরু হয়। কেউ কেউ বলতে পারেন যে, পৌরনিক কাহিনীগুলোতে তো পূজার প্রচলন ছিল। তবে তাদের জন্যে বলে রাখি, সাঁওতালদের পৌরনিক কাহিনীগুলোতে বিশেষ করে সৃষ্টির জায়গায় এ রকম কোন বিষয় নেয়। হিন্দুদের মধ্যে যেমন ঋষিরা প্রকৃতি এবং মানব তৈরি মূর্তি উভয়ের পূজার প্রচলন করেন, ঠিক তেমনি সাঁওতালদের পুজা গুলোও সময়ের বিবর্তনে হিন্দুদের সংস্পর্শে থেকে সাঁওতালদের মধ্যে চলে এসেছে। সাঁওতালদেরকে বৃহৎ পরিসরে হিন্দু ধর্মের অংশ হিসাবে বোদ্ধারা মনে করেন।   

সাঁওতালদের পৌরনিক কাহিনীঃ
আসুন এবার আমরা সাঁওতালদের পৌরনিক কাহিনীর দিকে এগোয়। সাঁওতালদের পৌরনিক কাহিনীতে মিলিয়ে দেখি, এ ধর্মের উৎপত্তি কোথায়।

১। সৃষ্টিকর্তা বিষয়কঃ
সাঁওতালদের সৃষ্টিকর্তার নাম ঠাকুর জিউ। যাকে ঘিরে সাঁওতাল জাতি সৃষ্টি। ধর্মের মধ্যে এই অংশকে প্রধান অংশ হিসাবে বিবেচনা করা উত্তম। কারণ, সব ধর্মের পার্থক্যগুলো এই জায়গায় বেশ প্রকটমান। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারেঃ একঈশ্বরবাদে বিশ্বাসী ইসলাম এবং খ্রিস্টান ধর্মের কথা বিবেচনা করুন; তাদের সব কিছুই প্রায় একই রকম কিন্তু আদম ও হবার পাপ করার জায়গায়টা আলাদা, যা পরবর্তীতে এই দুই ধর্মের বিরাট পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে, সাঁওতালদের ধর্মের এই গোঁড়ার জায়গায় আমাদের যাওয়ার প্রয়োজন আছে, এখান থেকে আমরা হয়ত আবিষ্কার করতে সমর্থ হবো যে, সাঁওতালদের কেন বেদীন বা পাগান ধর্মের সাথে সম্পর্কযুক্ত করে।

ঠাকুরজিউঃ
ঠাকুর শব্দ সাঁওতালদের সান্তালি ভাষার শব্দ নয়। এটি ভারতের প্রাচীন শব্দ। তাহলে সাঁওতালদের পৌরনিক কাহিনীর মধ্যে এই শব্দ এলো কি করে? যদি সাঁওতালদের আদি থেকে ধর্ম থাকত, তাহলে এই শব্দ এখানে যুক্ত হওয়ার কথা না। কেউ কেউ বলতে পারেন যে, এই শব্দ ভারতীয় লোকেদের সংযুক্তি। হ্যাঁ, এটাও হতে পারে। কারণ সনাতন ধর্মের মধ্যে ঠাকুরজিউ শব্দ পাওয়া যায়। যদি তাই হয়, আবার প্রশ্ন তৈরি হবে যে, তাহলে সাঁওতালদের ধর্মের বিষয় অন্য লোকেরা বা অসাওতালরা পরিবর্ধন করেছে?  যদিও সাঁওতালরা মারাংবুরুর কাছে প্রার্থনা করে। আবার কেউ কেউ বর্তমান সময়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে যে, এই ঠাকুরজিউই আসলে মারাংবুরু। আমরা জানি, মারাংবুরু মানে "বৃহৎ পাহাড়", তাহলে কি এই বৃহৎ পাহাড় "সৃষ্টিকর্তা"?  এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয়, তাহলো - ঠাকুর শব্দের অর্থ  "দেবতা" আবার  জিউ শব্দের অর্থও "দেব"।

পরবর্তী পর্বে সাঁওতালদের পৌরনিক কাহিনীর আরও কিছু বিষয় লক্ষ্য করবো।
   

বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০১৭

১২:৩৮:০০ PM

সান্তালদের ঐক্যমত - কিছু ঝাণ্ডাবাজরাই কি অন্তরায়!

সময়ের স্রোতে অনেক কিছু হারিয়ে যায়, কিন্তু লেখনী অনেক কিছু বাঁচিয়ে রাখে। আজকে সোশাল মাধ্যমগুলো মত 
প্রকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। এখানে স্বাধীনভাবে আমরা আমাদের মতামত ব্যক্ত করতে পারছি। ফলে একে অন্যের মতের বিষয়ে যেমন জানতে পারছি, তেমনি নিজের বা অন্যের সাথে অমিল গুলো দেখতে পাচ্ছি। একটি সমাজের ঐক্যমতের বিকল্প নাই , যদি সেই সমাজ সামগ্রিকভাবে এগিয়ে যেতে চায়। কিন্তু আমরা সবাই কমবেশি ঐক্যমত চাইছি, তারপরও কাছাকাছি আসতে পারছি না। এ রকম হওয়ার মুল কারণ হল - আমাদের মেনে নেয়ার প্রবণতা গুলো কমে যাচ্ছে। হয়ত এটা নিজের ইচ্ছাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে কিংবা নিজেকে ঠিক ভাবার জন্যে, নতুবা কারো দ্বারা বা কোন কিছুর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারণে - এ রকম বিষয়গুলো ঘটতে পারে।

সামাজিক  যোগাযোগ মাধ্যমে - এ বিষয়ে আলোচনা কমবেশি হচ্ছে, বিভিন্ন সমস্যাগুলো চিহ্নিত হচ্ছে, কিন্তু তারপরও কিছু হচ্ছে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার কিছু অংশ এখানে তুলে আনা হয়েছে, বাস্তবতা গুলো অনুধাবন করার জন্যে। যাদের কমেন্ট এখানে রয়েছে, তারাই যে সমাজের ঐক্যমত্যের অন্তরায় এমন নয় বরং এখানে যারা কমেন্ট করেছেন, তারা তাদের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।

আমাদের ঐক্যমত্যের জন্যে আরও পথ খুঁজতে হবে। সমাজে ঐক্যমত আনতে পারলে অনেক কিছুই সম্ভব। বিচ্ছিনতার অন্তরালে যাই থাক, ঐক্যমত্যের জায়গায়গুলো আমাদের বেশি করে অনুসন্ধান করতে হবে।

উক্ত আলোচনায় আমি একটি সূত্র দিয়েছিলাম, সূত্রটি এ রকম - 

"সবাই সবারটা মেনে নিলে ঐক্যমত সম্ভব"

সমাজ মানে আমি বুঝি - বিভিন্ন রঙের বিভিন্ন বর্ণের বিভিন্ন মতের অনেক মানুষের একত্রে বসবাস।

Ramdas Chand Hasda
Ramdas Chand Hasda kurha, right তবে জাতিভেদে সমাজের সঙ্গােও ভিন্ন। আপনি যা বলছেন তা বৈচিত্র্য।
Subas Murmu
Subas Murmu ব্যক্তি বিশেষে বৈচিত্র্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সমাজ গড়তে হলে কিছু বিষয়ে অবশ্যই ঐক্যমত্য থাকতে হবে।
Like · Reply · 2 · 21 hrs
অবুঝ বালক
অবুঝ বালক subas আগে তোমার গ্রামের মধ্যে ঐক্যমত গড়ে তোল!!!
Like · Reply · 1 · 5 hrs
Kurha Baskey
Kurha Baskey Subas Murmu আমি সূত্র দিয়েছি। খ্রিস্টানরা তারা তাদের ধর্মীয় অনুশাসন মেনে সমাজে কার্যক্রম করবে। ননখ্রিস্টানরা তাদের ধর্মীয় অনুশাসন মেনে তাদের সামাজের কার্যক্রম করবে।

আমাদের গ্রামে ৪টি পরিবার ননখ্রিস্টান তারা বাহা, সরহাঁয়, ইত্যাদি করছে, সেখানে খ্রিস্টা...See More
Like · Reply · 3 · 5 hrs
Kurha Baskey
Kurha Baskey Subas Murmu হ্যাঁ কিছুটা তো Tradition নষ্ট হচ্ছে। বৈশ্বিক প্রভাবে অনেক Traditionই তো নষ্ট হচ্ছে। বৈশ্বিক প্রভাবে নষ্ট হওয়া ট্র্যাডিশন যদি মেনে নিতে পারি, তবে আমার ভাইয়ের নষ্ট হয়ে যাওয়া ট্র্যাডিশন কেন আমি মেনে নিতে পারছি না?

তাহলে কি আমি ধর্মান্ধ?
Like · Reply · 1 · 5 hrs
Kurha Baskey
Kurha Baskey Ramdas Chand Hasda < kurha, right তবে জাতিভেদে সমাজের সঙ্গােও ভিন্ন। আপনি যা বলছেন তা বৈচিত্র্য।>

আমার মনে হয় শিক্ষার ২টো কারণ আছে।
১। বিবেককে প্রশিক্ষিত করা
২। একটি সার্টিফিকেট লাভ করা।

প্রশিক্ষিত বিবেক অনেক ধরনের জ্ঞানের সমষ্টিতে গড়ে উঠে। আর সেই বিবেক তার সিদ্ধান্ত নিজের মত করে নিতে সক্ষম।
এটা তো সত্য, যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতির মধ্যে ততকম কুসংস্কার বিদ্যমান। সাথে সাথে ট্র্যাডিশন থেকেও অনেক বেশি সরে আসে। তাহলে কি শিক্ষা খারাপ?

একজন প্রশিক্ষিত বিবেকধারি মানুষ অন্যকে সম্মান দিতে জানে, নিজের ভাল বোঝার সাথে সাথে অন্যের ভাল বুঝতে পারে।

আবার অপর দিকে ধর্মান্ধ মানুষ, অনেক সময় নিজেকে ঠিক জায়গায় ভাবে ফলে অন্যের বিষয় তার কাছে নগণ্য হয়ে উঠে।
Like · Reply · 1 · 4 hrs
Subas Murmu
Subas Murmu Kurha Baskey দাদা আপনাদের গ্রামে সান্তালদের নিয়ম আলাদা ও খ্রিষ্টান সান্তালদের নিয়ম আলাদা। কিন্তু সবাই সান্তাল দাবি করছেন। অথচ সবার একই নিয়ম নেই। আপনি এখনো বুঝতে পারেননি। এটা হিন্দু - মুসলিমের মত আমাদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি হয়ে গেছে।

বৈশ্বিক প্রচাবে অবশ্যই পরিবর্তন আসবে। তবে সেটা সবাইকে একসাথে করতে হবে। আমার আপনার ট্র‍্যাডিশন বৈশ্বিক প্রভাবে নষ্টা হয়নি। নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

আর সেই নষ্টামি কেন মেনে নিবো? এক নষ্টামি মেনে নিলে আর একটা চলে আসবে। আমরা চাই নষ্ট হয়ে যাওয়াকে শুধরে দিতে। যেন ভাইয়ে ভাইয়ে আবার একই উৎসবে, এখকই রীতিতে আনন্দে মেতে উঠতে পারি।

ধর্মান্ধ তারাই যারা ধর্মের বেড়া জাল থেকে বের হয়ে নিজের সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে পারেনা। নিজস্ব বিবাহ রীতিতে বিয়ে করতে পারেনা।
Like · Reply · 2 · 2 hrs
Kurha Baskey
Kurha Baskey Subas Murmu < অথচ সবার একই নিয়ম নেই। আপনি এখনো বুঝতে পারেননি। এটা হিন্দু - মুসলিমের মত আমাদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি হয়ে গেছে।>

প্রথমত আমি মনে হয় এ টুকু বুঝতে পেরেছি, তাহলো বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব সবার উপরে পড়েছে। বাঙ্গালি পরিচয় ধর্মীয় পরিচয়ে আলাদা হয়েছে। মুসলিম বাঙ্গালি, হিন্দু বাঙ্গালি এ রকম শব্দ এখন বই পত্রে লেখার অপেক্ষা।
বাঙালী জাতি ধর্মের মধ্যে কবে বিলীন হয় এটা দেখার বিষয়। একটা বৃহৎ জাতির এহেন অবস্থা তাহলে সান্তালদের অবস্থা কি হতে পারে?

দ্বিতীয়ত নিয়ম পরিবর্তনের ফলে জাতি পরিবর্তিত হয়ে যাবে, এখনো এমন বিবর্তন ঘটে নাই। সারা দুনিয়ায় আদিবাসীরা অরিজিন থেকে অনেক দুরে সরে এসেছে। আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এঁর উৎকৃষ্ট প্রমাণ। আফ্রিকার টুটো বৃহৎ আদিবাসি কিন্তু সিংহভাগ ধর্মান্তরিত, তাদেরকে এখনো টুটো নামেই চেনে।

ধর্ম পরিবর্তন জাতিগত নাম মুছেনি। কিংবা তারা অস্তিত্বহীন হয়ে যায়নি। কালচারের পরিবর্তনও তাদের অস্তিত্বহীন করেনি।
এভাবে অনেক উদাহরণ আছে। পরিবর্তন চলমান প্রক্রিয়া, মানুষের মানবিক থেকে আরম্ভ করে সব কিছুতেই। বিভাজন গুলো আরও কাছা কাছি হতে পারে শিক্ষার মাধ্যমে।
Kurha Baskey
Kurha Baskey Subas Murmu < বৈশ্বিক প্রচাবে অবশ্যই পরিবর্তন আসবে। তবে সেটা সবাইকে একসাথে করতে হবে। আমার আপনার ট্র‍্যাডিশন বৈশ্বিক প্রভাবে নষ্টা হয়নি। নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।>

কাউকে দোষ দেয়া আমি যথাযত মনে করি না। কেন? ধরুন ধর্ম। খ্রিস্টান ধর্মের বড় একটা কাজ হচ্ছে, প্রচার করা, খ্রিস্টের অনুসারী করা। ইসলামেরও তাই। তারা কি সেখান থেকে সরে আসবে? না। তাহলে আপনি আমি কি করবো?

নিজের খুঁটি শক্ত করা। নিজের বাড়ি সামলানো। এখন বলতে পারেন আমি তো দুর্বল। তাহলে শক্তিশালী হোন। ভারতের সংবাদ মাধ্যম গুলো যদি মাঝে মাঝে লক্ষ্য করে থাকেন দেখবেন, আরএসএস প্রকাশ্যে বলছে ভারতে হিন্দুর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

জাতিগুলো যতটুকু পারছে, তাদের সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। ধর্ম কে গালিগাল দিয়ে সময় নষ্ট করছে না। আমাদের সেদিকে নজর দেয়া উচিত।
Kurha Baskey
Kurha Baskey Subas Murmu < আর সেই নষ্টামি কেন মেনে নিবো? এক নষ্টামি মেনে নিলে আর একটা চলে আসবে। আমরা চাই নষ্ট হয়ে যাওয়াকে শুধরে দিতে। যেন ভাইয়ে ভাইয়ে আবার একই উৎসবে, এখকই রীতিতে আনন্দে মেতে উঠতে পারি।>

আমি জানি না, এই নষ্টামিটা কি? ধর্ম পরিবর্তন, আধুনিক হওয়া, অন্য সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমার কাছে নষ্টামি মানে- সন্ত্রাসী হওয়া, অনৈতিক এঁর ভিতর ডুবে যাওয়া, অন্যায় অবিচার এঁর মত খারাপ বিষয়ের সাথে জড়িয়ে পড়া। আমাদের সমাজ কি সে রকম হয়ে গেছে?

ধর্ম পরিবর্তন দুই ভাবে হয়েছে।
১। সুযোগ সুবিধার জন্যে।
২। প্রকৃত আধ্যাত্মিকতার জন্যে।

আপনি ১ নং দলের লোকদের ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারেন, কিন্তু ২নং দের পারবেন না। এশিয়াতে ধর্ম পরিবর্তনের হার বর্তমানে অন্য যে কোণ সময়ের চেয়ে বেশি।

সান্তালদের একটি পরিসংখ্যান আমার কাছে আছে, সেটা এ রকম বাংলাদেশ এবং নেপালে সিংহভাগ ধর্মান্তরিত হয়েছে। ভারতে ধর্মান্তর এঁর হার ৩.৯৬%। যদিও ভারতে ইতিমধ্যে আদিবাসিদের মধ্যে ধর্ম প্রচারের স্থানীয়ভাবে কিছু বিধিনিষেধ আছে, কিন্তু তারপরও এই হার আগামী সময়ে কি হতে পারে? কি ভাবে আটকাবেন?

কালচার পরিবর্তন হতে পারে সামাজ চাইলে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সবাই চলতে চাইবে সেটাই স্বাভাবিক। এভাবে মেনে নেয়ার মাধ্যমে একটি জায়গায় আসা সম্ভব।

সমাজ এভাবে গতিশীল থাকবে, এগিয়ে যাবে।
Like · Reply · 15 mins
Kurha Baskey
Kurha Baskey Subas Murmu < ধর্মান্ধ তারাই যারা ধর্মের বেড়া জাল থেকে বের হয়ে নিজের সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে পারেনা। নিজস্ব বিবাহ রীতিতে বিয়ে করতে পারেনা।>

আমার মনে হচ্ছে ধর্মান্ধতা ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করছেন। এই শব্দ extremist থেকে উদ্ভূত।
belief in and support for ideas that are very far from what most people consider correct or reasonable
বিয়ে নিজের সংস্কৃতির মাধ্যমে করছে, তবে সম্পূর্ণ রূপে নয়। একটা উদাহরণ দেই -
সান্তালদের Or bapla আছে। এই বিয়ে যদি এখন করেন, তাহলে কি আপনি আইন থেকে রেহাই পাবেন? না, পাবেন না। আপনি কিন্তু দেশের আইনের জন্যে হলেও আপনার সংস্কৃতির অংশ বাদ দিয়েছেন। সময়ের সাথে সাথে আপনার কালচার কিন্তু অটোমেটিক পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। তাহলে এটা কাঁকে দোষ দেবেন?

বুধবার, ৭ জুন, ২০১৭

১:১৬:০০ PM

Bhiť

Sanam diń mań inaḱ bhiť re
Cedaḱ ẽm jhilạ koaḱ?
Bhiť dom lũsũpũńḍũ keť tiń.

Baḍai gecom--
Iń ma amaḱ mẽt ńel lekhać
Dhũd geń ńel.
Ãmaḱ sẽńgel arať teń,
Loḱ ge.

Amaḱ muṭhạṅ iń ńel lekhać,
Dhạrti geń hiṛiń.
Cedaḱ am do oṅka?
Ńel re hõ bạrić,
Baṅ re hõ sĩṛić.

Hãpe joba baha, baha purạo leń ge,
Huḍur daḱ ko ṭhoṛa leń ge,
Dạkiń hoi rẽạṛ mạchić leń ge.

Kãpurmũli baha,
Sut́ re soge kateć iń lại ama,
Ińaḱ jiwi tinạḱ chaṭ paṭaoḱ kań tińạ.
Bhạdại busuḱ re sogeḱ lạgiť,
Reaṛ daḱ re umuḱ lạgiť.
Jioṅ ṭhão keteć lạgiť.

ẽńteť ãm re ge jiwi batao,
Jạť badhao,
Dulạṛ bachao,
Suluḱ joiṅ,
Hoṛmo reaṛ.

বৃহস্পতিবার, ১৮ মে, ২০১৭

২:২৯:০০ PM

অলচিকি কাদের জন্যে?

বিভিন্ন অক্ষর থেকে অলচিকি'র অক্ষরগুলো সংগৃহীত

 অলচিকির সাথে আমার পরিচয় ঘটেছিল ২০০৩ সালে। সান্তালদের অক্ষর - ব্যাস এ টুকুর জন্যেই অলচিকির প্রতি অগাধ ভালবাসায় বুকটা ভরে গিয়েছিল। যেহেতু সাহিত্য চর্চার একজন কর্মী  হিসাবে, এই ভালবাসায় কোন ফাঁক ছিল না। আমার বড় পিসির পুরো পরিবার ভারতে সেটেল, পিসাত ভাইকে অনুরোধ করে একটা বইও আনালাম। পিসাত ভাই  নিজেও সে সময় অলচিকি জানত না, তাই সেও আমাকে সাহায্য করতে পারল না। আমার শেখার ইচ্ছা অধরাই থেকে গেলো, মনে হচ্ছিল। 


সান্তাল/হড় গ্রুপ সান্তালদের মধ্যে প্রথম কোন গ্রুপ

কিন্তু হটাৎ ইচ্ছার বাতাসে হাওয়া বইতে শুরু করে। আর এটা ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ২০০৮ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক খুলেছি, এক বছর ২ -৩ জন ছাড়া বন্ধুই বানাতে পারিনি। ২০০৯ সাল হটাৎ দেখি অনেক সান্তাল ভাইবোনদের নাম ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে। আর দেরি কিসের,  সান্তাল বন্ধুদের এড করতে থাকলাম এবং প্রায় বন্ধুরা ভারতের। কারণ সে সময় বাংলাদেশে ইন্টেরনেট এত সহজলভ্য ছিল না। কিন্তু তাতেও আমার মন ভরল না। সান্তাল ভাইবোনদের এক কাতারে নিয়ে আসার জন্যে ২০০৯ সালে প্রথম Santals / Hor নামে একটি গ্রুপ খোলা হয়। চমকার অভিজ্ঞতা, অনেক সান্তাল ভাইবোনদের পেলাম, বিভিন্ন আলোচনা হতে লাগলো। 


সে সময় অলচিকি চিন্তা শক্তিকে আটকে দিয়েছিল

এ ভাবে বছরের পর  বছর চেষ্টা করেছি
২০১০ সালের দিকে অলচিকি নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হল, আমার পুরাতন ভালবাসা আবার জাগ্রত হল। আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে অলচিকি শিখতে লাগলাম। তখন অলচিকি অনেকেই ভাল জানত না, তাছাড়া গ্রামারের দিক দিয়েও সমস্যা ছিল, তাই খুব সুবিধা করতে পারছিলাম না, তবুও অদম্য ইচ্ছার কারণে অক্ষর গুলো মুখস্ত করে ফেললাম। কিন্তু সময় যতই অতিবাহিত হতে থাকলো, অলচিকি আমার কাছে আরও জটিল হতে শুরু করলো। জাতিভেদ, অরিজিনাল, ডুপ্লিকেট ইত্যাদি বিষয় অলচিকিই টেনে নিয়ে এলো। অম্ল মধুর, চমকার অভিজ্ঞতার মধ্যে আমি সেখানে একজন bãhoãriń পেলাম। সেখানে প্রথম আবিষ্কার করলাম biń শব্দ, যা আমরা বড় শালা শালিদের বেলায় ব্যাবহার করি। সে যা হোক বিয়ের আগেই একজন বড় শালা পাওয়া আমার জন্যে অনেক আনন্দের ছিল। বর্তমানে ঘটনাক্রমে আমার বিবাহিত প্রিয়তমা সহধর্মীও ঐ পদবির।

যাহোক, সে সময় আমি আর একটি বিদেশি ভাষা শিখছিলাম - পর্তুগিজ স্প্যানিশ এবং সেটা কোন শিক্ষক ছাড়া। মোটামুটি ৩ মাসের মধ্যে সে ভাষার বোধগম্যতা চলে এসেছিল (বর্তমানে জাপানিজ শিখছি এবং এটা অনেক ভালভাবে) ।  এই কারণে আমার কনফিডেন্স লেভেল বেড়ে গিয়েছিল যে, অলচিকিটাকেও শিখতে পারবো। কিন্তু পারিনি। আমি সান্তাল, সান্তালি সাহিত্য চর্চা করি। তাও পারিনি। তাহলে আমার মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। অলচিকি কাদের জন্যে   


আমি একজন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিত মানুষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েছি। আমার শেখার ধরন আর একজন অল্পশিক্ষিত বা অশিক্ষিত লোকের শেখার ধরনের মধ্যে পার্থক্য আছে। যেমনঃ 

Ạkil Sãhet́ ২০১০


শব্দ গঠন করতে হয় কিভাবে?
আমার শিক্ষিত জ্ঞান বলে যদি লেখার ধরন আলফাবেটিক হয়,-
তাহলে সন্ধি বা স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জন বর্ণ এর ব্যকরনসম্মতভাবে একত্রীভূত করে, শব্দ গঠন করতে হয়। আর এ উচ্চারণ উভয় বর্ণের ধারা অনুযায়ী হবে। ধন্নিগুচ্ছকে একই ধ্বনি হিসাবে বিভিন্নরূপে ব্যাবহার (Phoneme)যেমন - ল্যাটিন অক্ষর।

 
যদি লোগোগ্রাফিক হয় -
ছোট ছোট ভাগে ব্যকরনগতও লেখা এবং উচ্চারণ করা। যেমন - চায়নিজ 

দলমাত্রিক বা Syllabic
স্বর অনুযায়ী ভাগ করে উচ্চারণ করা, যেমন - জাপানিজ কানাওয়া + টার = ওয়াটার

আবুজিদা
এটাও phoneme তবে ( ব্যঞ্জনবর্ণ + স্বরবর্ণ), যেমন - দেবনাগরী। তবে এর অনেক রকম ভেদ আছে, ইন্ডিক অক্ষরগুলো যেমন - উত্তর ইন্ডিক ও দক্ষিণ ইন্ডিক এঁর মধ্যে পার্থক্য আছে। এই ইন্ডিক লিপি গুলিকে ব্রাহ্মী লিপি বলা হয়।
শব্দাংশের মধ্যে নির্দিষ্ট স্বরবর্ণ আছে, এর জন্যে কিছু ডাইক্রেটিক স্বরবর্ণ ব্যাবহার করা হয়। যেহেতু ব্রাহ্মী লিপির অন্তর্গত অনেক লিপি আছে, তাই এর অনেক রকম ভেদ আছে।

এখানে এই বিষয়টা সামনে আনা হয়েছে, এই কারণে যে, অলচিকি এই লিপির অন্তর্গত বলে বা এই লিপি থেকে সংগৃহীত বলে বর্ণ বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। তাহলে এর যে নিয়ম কানুন সেটা অলচিকি অনুসৃত হবে?

প্রথম বিষয়ঃ
কিন্তু অলচিকি এর ধারে কাছে নাই। যেমন বাংলা লিপি, যা শব্দীয় বর্ণমালা লিপি।  ব্রাহ্মী লিপির অন্তর্গত সিদ্ধং
2012
লিপি থেকে আগত। এর নিয়ম কানুন গুলো এক নজরে দেখি।

"
যখন কোনো স্বরবর্ণ শব্দ বা শব্দাংশের প্রথমে বসে অথবা অন্য কোন স্বরবর্ণের পরে বসে, তখন তাকে আলাদা বর্ণ হিসেবে লেখা হয়। কিন্তু কোনো স্বরবর্ণ কোনো ব্যঞ্জনবর্ণের পরে বসলে, তখন নির্দিষ্ট চিহ্ন (বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন) দিয়ে একে প্রকাশ করা হয়। এই চিহ্নকে কার বলা হয়। যেমন, ক ব্যঞ্জনবর্ণের পরে এ স্বরবর্ণ বসলে তখন ে চিহ্ন বা এ-কার ব্যবহৃত হয়ে কে লেখা হয়।"

দ্বিতীয় বিষয়ঃ
অলচিকি বর্ণমালায় একটি ধ্বনিকেই ২টি পৃথক অক্ষর দ্বারা এবং ২টি পৃথক ধ্বনিকে একটিমাত্র অক্ষর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে যা ভাষাবিজ্ঞান বা ধ্বনিবিদ্যাসম্মত নয়।
এই রকম অনেক কিছু আছে, যা কোন বৈজ্ঞানিক থিওরি অলচিকি অনুসরণ করে না।

এ রকম জিনিষ কারা ভালভাবে শিখতে পারবে?
যারা কম জানে।

সব উলটা পাল্টা। যেমন ঃ লিখবেন - উদাআকা, উচ্চারণ করবেন - দাকা। অলচিকি আলারা, এই উচ্চারণ এর উদাহরণ দিলে গ্রামের অশিক্ষিত মানুষের মত, ইংরেজি Put এবং But এর উদাহরণ আনে। কেন এমন উদাহরণ দিলাম? অক্ষরের নামের সাথে উচ্চারণ জড়িত না হওয়াটা অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। এটা ছোট বাচ্চাদের মানুষিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত করে, এ বিষয়ে পরের প্রবন্ধে আলোচনা করবো। 

শিক্ষার অভাব কতটুকু একটু চিন্তা করলে পাবেন। প্রথমত - ইংরেজি অক্ষর আবুজিদা নয়, তাই তার উচ্চারণ ধারাকে উদাহরণ হিসাবে ব্যাবহার করা চরম বোকামি।

put ( p
ʰʊt]) এর মধ্যে aspiration প্রাথমিক ব্যঞ্জনবর্ণ আছে, মুখ দিয়ে ধরে বাতাস ছেড়ে দেয়া। কিন্তু But [bʌt] এর মধ্যে স্বরনালির শব্দ আছে বা স্বর শব্দ সম্বলিত ব্যঞ্জনবর্ণ আছে, কণ্ঠ নালি থেকে শব্দ বেরিয়ে আসে।- এ গুলোকে বলে বৈজ্ঞানিক

অলচিকির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নাই। গ্রামারের যে বিষয়গুলো চিহ্নিত করা হয়েছে,- তা অবৈজ্ঞানিক, ঝাড় ফুক মার্কা। A Framework for Learning and Understanding Santali in Ol Chiki Script লেখনীতে noun, pronoun, verb, sentence ইত্যাদি দিয়ে ১১১ পৃষ্ঠা পূর্ণ করা হয়েছে।

লেখনী ও উচ্চারণের প্রাণ - ধ্বনি তত্ত্ব নিয়ে গোঁজামিল ছাড়া কিছুই নাই।

অলচিকি ছোট বাচ্চাকে রূপকথা শেখানোর বুলি মাত্র। শিক্ষিত ও বড়দের জন্যে এটা সত্যিই বেমানান।


About

Ghonokuasha Baskey is a Santal writer of Bangladesh. He has started writing since 1985.