শনিবার, ৯ মার্চ, ২০১৩

সান্তালি বর্ণমালা এবং প্রভাব-এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস



1867 সাল থেকে ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ-এর সান্তালরা  সম্প্রসারিত ল্যাটিন বা রোমান বর্ণমালা, সান্তালি ভাষা লেখার জন্য ব্যবহার করে আসছে। স্বাধীনতা পরবর্তীতে ভারতীয় সান্তালরা  তাদের নগরকেন্দ্রিক সমৃদ্ধিশীল দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার দরুন মৌলবাদী সান্তালরা,  রোমান বর্ণমালাকে একটি বিদেশী বর্ণমালা এবং তা ব্যবহার করাকে ঘৃনার বিষয়বস্তু করার অপচেষ্টা শুরু করে।  প̠থম দিকে সান্তালি লেখা শুরু হয় নিজ নিজ রাজ্যের ভাষার বর্ণমালায়  (অর্থাৎ আঞ্চলিক ভাষা বর্ণমালায়) সেখানে তারা অবস্থান নেয় যে, ভারতের একটি সাধারণ বর্ণমালা নেই বা  একটি সাধারণ ভাষা নেই যা সব রাজ্যের জন্য প্রযোজ্য। ফলশ্রুতিতে  ইংরেজি ভাষাকে আন্তঃরাজ্য এবং প্রদেশিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়, যদিও প্রতিটি রাজ্যে তাদের তার নিজস্ব ভাষা ও বর্ণমালা ছিল স্বাধীনতা পরবর্তীতে সান্তালরা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাস শুরু করায়, সেই রাজ্যের নিজ নিজ বর্ণমালায় বা রোমান সান্তালি বর্ণমালায় সান্তালি ভাষা লেখার জন্য ব্যবহার শুরু করে। পশ্চিমবঙ্গের সান্তালরা বাংলা বর্ণমালা, উড়িষ্যা রাজ্যে ওড়িয়া বর্ণমালা, বিহার এবং ঝাড়খন্ড দেবনাগরি বর্ণমালা ব্যবহার করা হয়। এই সব বর্ণমালা রাজ্য কর্তৃক সহায়তাপুষ্ট, শুধু ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ যেখানে সরকার সরাসরি সান্তালি ভাষায় বাংলা বর্নমালা পৃষ্টপোষক করার জন্য কাজ করে এবং একই সময়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে রোমান বর্ণমালায় পাঠ্যপুস্তক ছাপায়। পাঠ্যপুস্তুকটির নাম “উচ্চ মাধ্যমিক নির্বাচিত সান্তালি (পদ্য ও গদ্য)”, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা পরিষদ 1976।   

সম্প্রতি বছরগুলোতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সান্তালি ভাষার বর্ণমালা হিসেবে অলচিকিকে পূর্ণ পৃষ্টপোষকতা প্রদান করেছে। যাইহোক, এই স্বপ্রতিদ্বন্দ্বীতা, বিভিন্ন রাজ্য সরকার দ্বারা পৃষ্টপোষকতা ‘রোমান সান্তালি বর্ণমালা’র  মৌলিক  অবস্থান থেকে স্থানচ্যুত করতে পারেনি। সান্তালি ভাষা শেখার জন্য সব ধরনের উপকরণ এখনো পূর্ণরূপে রোমান সান্তালি বর্ণমালা’য় মধ্যে বিদ্যমান। রোমান সান্তালি বর্ণমালার শত বিরোধীতার মুখেও বর্তমানে অলচিকি বর্ণমালা একক কোন রাজ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি, তাছাড়া বিশ্বের অন্যান্য জায়গা যেখানে সান্তালরা বসবাস করে যেমন বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালেও এর কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই।

প্রসারিত ল্যাটিন বা রোমান সান্তালি বর্ণমালা পরিপুষ্ট এবং প্রস্তুত সান্তালদের সকল শিক্ষাক্ষেত্রে,  বিভিন্ন রাজ্য ও বিদেশেও, যেমন বাংলাদেশ, ভুটান এবং নেপাল। এখানে উল্লেখ্যযোগ্য যে, ভারতের বিভিন্ন আন্তঃরাজ্য যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি (যা রোমান বর্ণমালায় লেখা হয়) অনুমোদিত, সকল রাজ্যে  প্রাথমিক স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়বস্তু একটি আবশ্যিক বিষয়। এই জন্য রোমান সান্তালি বর্ণমালা ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাড়তি কোন চাপ হয়ে উঠে না, যখন একজন ইংরেজি বর্ণমালার সাথে পরিচিত থাকে। রোমান বর্ণমালা তাদের সহজভাবে বুঝতে সাহায্য করে তাদের ভাষা এবং সান্তালি উচ্চারণের গুণাগুণ, যেগুলো ইংরেজি উচ্চারণের খুব কাছাকাছি (উদাহরণ)। 

কিছু প্রসারিত ইংরেজি বর্ণমালার উচ্চারণ একজন শিক্ষিত সান্তাল আধা ঘন্টার মধ্যে আয়ত্ব করতে পারে। একটি কথা মনে রাখা দরকার যে, ভারতে কেহই ইংরেজি শেখাকে এড়াতে পারে না। সেই জন্য প্রয়োজনীয় তাগিদে রোমান বর্ণমালা উন্নয়নশীল সান্তালদের মধ্যে প্রবেশ করেছে।

কিছু স্বার্থনৈষী জাতীয়তাবাদ মৌলবাদি মুল ভারতীয় সমাজ থেকে সান্তালদের আলাদা করার জন্য মিথ্যে পৌরনিক কাহিনীর অবতারণা করে রোমান সান্তালি বর্ণমালার বিপক্ষে মিথ্যে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রায় স্বচ্ছল ভারতীয় পরিবার এবং সমাজের মুলধারার জনগোষ্টি তাদের সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এ  শিক্ষাগ্রহণের জন্য পাঠিয়ে থাকে, যাতে উচ্চ শিক্ষার জন্য ইউরোপ, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার মত দেশে গমন করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

উত্তরপূর্ব ভারতে আদিবাসিরা যেমন মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং মেঘালয়ের আদিবাসিরা তাদের নিজস্ব ভাষা লেখার জন্য রোমান বর্ণমালা ব্যবহার করে থাকে। এই আদিবাসি সম্প্রদায়েরা একতা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সান্তালদের থেকে অনেক অগ্রসরমান।  সামগ্রিক উন্নয়ন এবং দৃঢ় একতার বন্ধনের জন্য তাদের ভাষার সাহিত্য লেখার জন্য একটি বর্ণমালা ব্যবহার করে বলে এই সাফল্যটুকু সম্ভবপর হয়েছে।

রোমানের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার উদ্দেশ্য হলো-- সান্তালি ভাষার অক্ষুন্নতা সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং একতার জন্য সাহিত্যে একটি নির্দিষ্ট বর্ণমালা ব্যবহার করা, যাতে সান্তালি ভাষায় যারা কথা বলে কিন্ত বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যেমন ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভুটান অঞ্চলের সমগ্র সান্তাল জনগোষ্ঠির মধ্যে দৃঢ় একতার বন্ধন নির্মান করা।

এই মহৎ উদ্দেশ্য সফল করার জন্য, প্রসারিত বর্ণমালা বা রোমান বর্ণমালা ব্যবহার হবে একটি সহজতর মাধ্যম। আগে যেমন বলা হয়েছে যে, সান্তালরা প্রসারিত ল্যাটিন বর্ণমালা বা রোমান  বর্ণমালা ব্যবহার করতে শুরু করে যখন থেকে সান্তালি সাহিত্যের আবির্ভাব ঘটে। এই বর্ণমালা সান্তালি সাহিত্যে বা ভাষায় 130 বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রসারিত ল্যাটিন বা রোমান বর্ণমালা, উচ্চারণের গুণাগুণ অনুসারে সান্তালি ভাষার সব ধরনের নিঁখুত উচ্চারণ করতে সক্ষম। রোমান বর্ণমালা যেটা সাধারণ উচ্চারণ রীতি রয়েছে, তাকে কোনরুপ পরিবর্তন বা বিকৃত না করেই, সাথে কিছু চিহ্ন দ্বারা সন্নিবেশিত প্রসারিত ল্যাটিন বা রোমান বর্ণমালা সান্তালি ভাষাভাষিরা স্বাচ্ছন্দে ব্যবহার করে আসছে। প্রসারিত ল্যাটিন বা রোমান সান্তালি বর্ণমালা- ভারত, বাংলাদেশ এবং নেপালের সান্তালদের ভাষা ও সাহিত্যে সমানতালে উন্নয়ন করতে সক্ষম।

বর্ণমালার কোন নির্দিষ্ট দেশের সীমারেখা নেই। প্রয়োজনের তাগিদে বর্ণমালা এক দেশের সীমা ছাড়িয়ে অন্য দেশে যেতে পারে। প্রায় সব সরকারেরই শিশু শ্রেনী পর্যায়ে ইংরেজি শিখিয়ে থাকে, তাই এই অবস্থানে রোমান সান্তালি বর্ণমালা সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করছে। যারা সান্তালি বর্ণমালায় সাহিত্য অধ্যয়ন করবে, তারা ইংরেজির সাথেও কমবেশী পরিচিত হবে। আর সান্তালি ভাষার উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ এবং নেপালকেও সমানস্তরে সহযোগিতা করা সম্ভব হবে।

উদাহরণ-1:
সান্তালি ভাষায় রোমান বর্ণমালার ব্যবহার
সান্তালি ভাষায় উচ্চারিত প্রধান বর্ণমালাগুলো : a, b, c, d, e, g, h, i, j, k, l, m, n, o, p, r, s, t, u, v, w, ও y এবং এর বড় হাতের অক্ষরগুলো.
10 টি উচ্চ উচ্চারিত শব্দ রয়েছে এবং
‘h’ ব্যঞ্জনবর্ণ যুক্ত হয়ে শব্দগুলোকে উচ্চ উচ্চারণ করে থাকে। যেমন  bh, ch, dh, dh, gh, jh, kh, ph , th and th  

সান্তালি রোমান বর্ণমালায় কিছু চিহ্ন রয়েছে বা  diacritical marks যেগুলো অক্ষরের উপরে বা নিচে ব্যবহার হয়ে থাকে এই চিহ্নগুলো রোমান বর্ণমালার কোন চিহ্ন বা কোন উচ্চারণ প্রকাশ করে না। চিহ্নগুলো নিম্নরূপ:  The sign ‘_’ ব্যবহুত হয়  e এবং o এর নিচে মুক্ত ভাওয়েল ধ্বনি হিসেবে। আর কিছু স্বর ধ্বনি:
E , e = একটি মুক্ত স্বরধ্বনি, e.g. Er, er as ‘hare’ in English.
E , e =
একটি বন্ধ স্বরধ্বনি, e.g.Ekal, ekal as ‘hen’ in English.
O, o =
একটি মুক্ত স্বরধ্বনি, e.g. Ol, ol as ‘all’ in English.
O, o =
একটি বন্ধ স্বরধ্বনি, e.g. Onko, onko as ‘pole’ in English.
......................
তির্যক হাইপ্যান ‘_’ যা  N, n উপর ব্যবহৃত হয় এবং ইংরেজিতে পাওয়া যায় না। কিন্ত এই ধরনের উচ্চারণ ভারতীয় অনেক ভাষায় পাওয়া যায়।  এটা ইংরেজির  eng এর খুব কাছাকাছি উচ্চারণ ‘engine’ , সান্তালি ‘Bin’ মানে ‘Serpent’ in English.
ফোটা চিহ্ন  d, r and t এর নিচে ব্যবহৃত হয়, যা স্বরবর্ণের উচ্চারণকে দৃঢ় করে। স্বরবর্ণগুলো নিম্নরূপ:
D , d e.g. এগুলো  D, d , ইংরেজির উচ্চারণের মতই, যেমন D,d as in ‘Dog’.
R , r e.g. Ror, Kora. এই উচ্চারণগুলো ইংরেজিতে নেই কিন্তু  Chandigarh, শেষের syllable ‘rh’ মত।
T , t e.g.  এর উচ্চারণ Taka, taka here T, t ইংরেজির মতই যেমন T, t as ‘Torn’ in English.
ফোটা চিহ্ন ‘.’ সাধারণত n i.e. n এর উচ্চারণ দৃঢ় হবে এবং নাক থেকে বের হয়ে আসবে। is used to indicate it’s hardened sound coming through the nose. উচ্চারণটি ইংরেজি  ‘n’ এর মত যেমন ‘Long’ , ‘song’ , e.g. gon, hongor সান্তালি.
..............................
উর্ধ কমা ‘’’  c, k, p and t বড় এবং ছোট উভয় অক্ষরেই ব্যবহার হয়, যা   checked sound হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সান্তালি ব্যঞ্জণবর্ণে  e.g. c’, k’, p’and t’  দৃঢ় ধ্বনি উচ্চারিত হয় এবং মুন্ডারি ভাষায় , e.g. lac’, mak’, ap’, ret’.
...............................................
The Roman script Santali uses the Arabic numerals – 0,
1, 2, 3, 4, 5, 6, 7, 8, 9 . The roman script Santali letters and diacritical marks and numerals in most cases , correspond with the English keyboard letters and numerals.

( ইংরেজি লেখা অনুসৃত)

কোন মন্তব্য নেই:

About

Ghonokuasha Baskey is a Santal writer of Bangladesh. He has started writing since 1985.