অলচিকি ওড়িশার সান্তালদের নোংরা রাজনীতির ফসল
ত্রিশ দশক থেকে অলচিকি নিয়ে প্রচারনা শুরু হয়। কিন্তু সে সময়
ষাট দশকে এসে অলচিকিকে রোমান
এখানে বলে রাখা ভালো যে, অলচিকিকে নিয়ে ওড়িশার সান্তালরা একছত্র ভাবে সমর্থন এবং একে নিয়ে নোংরা রাজনীতি করে গেছেন। - এতে জাতি বিভোক্ত হোক কিংবা ভাষা নষ্ট হোক। তারা কোন কিছুকেই পরোয়া করেনি।
আশির দশকে এসে ওড়িশার সান্তালরা অলচিকিকে সামনে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজনীতির রাস্তা
নব্বই দশকে এসে তারা আরও নোংরা রাজনীতি শুরু করে। রোমান সান্তালি লিপিকে তারা প্রকাশ্যে খ্রিস্টান ধর্মের রঙ লাগিয়ে দেয়। তারা প্রচার শুরু করে যে, রোমান সান্তালি লিপি হল খ্রিস্টানদের লিপি, এটা ইংরেজদের লিপি। এভাবে ধীরে ধীরে এ প্রচারকে তারা বেগবান করে। মানুষের মাথার ভিতর ঢোকাতে থাকে, কিন্তু কোন ভাবে সে রকম কাজ করছিল না। সেই সময় ঝাড়খন্ডের আন্দোলন তুঙ্গে। শিবু সরেন আদিবাসিদের অভিসংবাদিত নেতা হয়ে উঠেছেন। কিন্তু ওড়িশার সান্তালদের তো কিছু নেই। তাদের উচ্চাভিলাসি মন আরও বেশি উচ্চাভিলাসি হয়ে উঠে। নব্বই দশকের শেষের দিকে তারা অলচিকির ইউনিকোড পেয়ে যায়। এখানে তাদের নোংরা রাজনীতিকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
বিশ শতকে এসে ঝাড়খন্ড রাজ্য স্বীকৃতি পায়, কিন্তু ওড়িশার সান্তালদের পালে তেমন কোন অর্জন নেই। তারা যেন উন্মাদ প্রায় হয়ে যায়। সেই সময় ভারতে জাতপাত ধর্মের রাজনীতি প্রায় প্রকাশ্যে শুরু হয়, ক্ষমতায় ধর্মের ঝান্ডাধারিরা চলে আসে। ওড়িশার সান্তালরা মোক্ষম সময় খুজে পায়। তারা এবার প্রকাশ্যে সান্তালদের মধ্যে ধর্মের বিভাজন নিয়ে আসে। বলা শুরু করে, সান্তালারা যারা খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারি, তারা আর সান্তাল না, তারা খ্রিস্টান। এটা ছিল আবেগের উপর চরম আঘাত। রোমান লিপি সমর্থকরা ধীরে ধীরে কোনঠাসা হতে থাকে। ওড়িশার সান্তালরা পুরো সান্তাল জাতিকে দুই ভাগে ভাগ করার ষড়যন্ত্রের নীল নকশা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এত দিন তারা রোমান লিপি নিয়ে সান্তালদের মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এবার তারা মাথা ছেড়ে হৃদয়ে বা বুকে আঘাত করার সুত্রপাত করে। এ আঘাতে "আন্তজার্তিক সান্তাল কাউন্সিল" এর মত নিরপেক্ষ সংগঠন, তাদের ছাতার তলায় ঢুকে পড়ে। ২০১০ সাল পর্যন্ত এই সংগঠন সকল সান্তালদের অর্থাৎ ধর্ম বর্ন নির্বিশেষ সকলকে নিয়ে সান্তালি ভাষা উন্নয়নে কাজ করছিল, হটাৎ করে তারা বাংলাদেশের সান্তালদের ( যারা রোমান লিপি সমর্থকদের ) বাদ দিয়ে দেয়। সেই জায়গায় যারা অলচিকি সমর্থন করে বাংলাদেশ থেকে তাদের আমন্ত্রন জানানো শুরু করে। কিন্তু যাদের বাংলাদেশ থেকে এই সংগঠনকে আমন্ত্রন জানানো হয়, তাদের সান্তালি ভাষা নিয়ে কোন ন্যূনতম জ্ঞান নেই, নেই এই বিষয়ে কোন পড়া শুনা, নেই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সাথে কোন সম্পর্ক। ওড়িশার সান্তালদের নোংরা রাজনীতির খেলায় "আন্তজার্তিক সান্তাল কাউন্সিল" পুরোপুরি সামিল হয়ে পড়ে। সান্তালদের বৃহৎ ঐকের যে অপার সম্ভাবনার একটা প্রতিষ্ঠান ছিল, সেটাকেও তারা কলুষিত করে ফেলে। ঐকের কফিনে শেষ পেরেগ টুকু তাদের দ্বারাই তারা ঠুকে দেয়।
২০২৩ সালে এসে কিভাবে তারা অলচিকিকে সামনে নিচ্ছে?
ভারতের সান্তালদের রাজনীতির ধারক বাহক হয়ে উঠেছে অলচিকি। ওড়িশায় তাদের রাজনীতি করে বেশি ফায়দা নেই, কারন ওড়িশায় একটা জেলাতে সান্তালদের যত চালচাতুরি। এ জন্যে তারা পশ্চিম বঙ্গের দিকে হাত বাড়ায়। সেখানকার রাজনীতি কিছুটা অন্ধকারময়। সেখানকার সান্তালরা জঙ্গলমহলের মতই। সেখানকার সান্তালদের রাজনীতির মধ্যে তারা অলচিকি ঢুকিয়ে দেয়- এটাও ধর্মের ভিত্তিতে। এটা ইলেক্ট্রিকের মত কাজে লেগে যায়। এই বিষয়টা তাদেরকে আরও উৎসাহিত করে। এর রেশ ধরেই সালখান মুরমুরা সান্তাল পারগানায় অলচিকির ঝান্ডা নিয়ে হাজির হওয়ার চেষ্টা করছে।
অলচিকি শিখলে সরকারী চাকরি পাওয়া যাবে- নোংরা রাজনীতির আরও একটি কূটকৌশল তারা ঢুকিয়ে দেয়। এটা সাধারন ছাত্র ছাত্রিদের কাছে খুবই লোভনীয় হয়ে উঠে। আজকের ছাত্র-ছাত্রিরা যারা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ তাদের সামনে এই লোভনীয় খাবার লেলিয়ে দিয়ে, আজকে এবং আগামী প্রজম্নকে বিকলাঙ্গ করে দেয়া হলো।
ভোট ও পেটের রাজনীতিতে সফল হয়ে, তারা বর্তমান এবং আগামি সান্তাল জাতিকে একটি বিকৃত সান্তালি ভাষার দিকে আরও একধাপ চতুরতার সাথে এগিয়ে নিল।
সান্তালি ভাষা ওড়িশা সান্তালির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বেঃ
সান্তালি ভাষায় বা সাহিত্যে ২০০০০ বেশী শব্দ ভান্ডার আছে। সান্তালি সাহিত্যে এই শব্দ গুলোই প্রাণ। ভাষা বিজ্ঞানীদের মতে সান্তালি ভাষার এই বিরাট শব্দ ভান্ডার সান্তালি ভাষা ও সাহিত্যকে করেছে অনন্য। এই শব্দ ভান্ডারের জন্য সান্তালি ভাষার অমুল্য মাধুর্য বিদ্যমান। ভাষা বিজ্ঞানীরা সান্তালি ভাষাকে সঠিক উপায়ে উচ্চারনের জন্যে ৫৯ টার ধ্বনি প্রয়োজন আছে বলে মতামত দেন। কিন্তু ওড়িশার অলচিকিতে ৩০টি ধ্বনি আছে। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখলে অলচিকি লিপি সান্তালি ভাষার মোট ৫০% কম শব্দ সঠিক ভাবে উচ্চারন করতে সক্ষম। তাহলে এই অক্ষর দিয়ে সান্তালি চর্চা করতে থাকলে এক সময় সান্তালি ভাষার ৫০% বেশী শব্দ হারিয়ে যাবে। সেই সময় সান্তালি ভাষার মাধুর্য সম্পূর্ণ ভাবে বিলিন হয়ে যাবে।
ওড়িশার সান্তালি অন্য সব সান্তালি থেকে আলাদা। আলাদা এর উচ্চারনের ধরন, বিশেষণের পদ্ধতি (সান্তালদের জন্য লজ্জার মত বিষয়)। এদের সান্তালি সাংস্কৃতিক দিক গুলোও অন্য সকল সান্তালদের থেকে আলাদা।
নোংরা রাজনীতির কবলে বাংলাদেশের সান্তালরাঃ
বাংলাদেশে সান্তালদের মোট জনসংখ্যার .০৩% অলচিকি সান্তাল অলচিকি সমর্থন করে। বাকি ৯৯.০৭% জনগন রোমান সান্তালি সমর্থন করেন। কিন্তু এই নোংরা রাজনীতির কি এক নির্মম পরিহাস এই বৃহৎ ৯৯.০৭% জগণকে .০৩% সান্তাল আটকে দিয়েছে।
এই নোংরা রাজনীতি ১ জন ভাইকে ১০ জনের বিরুদ্ধে দাড় করিয়ে দিয়েছে। এক সময় সান্তাল সমাজ ব্যবস্থায় গ্রামের কোন লোক যদি বিপদে পড়ত, এর জন্যে ৫ জনের যদি ক্ষতি হত, তাহলে তাকে তারা সাহায্য করত। কিন্তু এখন ৩ জন মানুষ ৩০০ জনের ক্ষতি করছে।
বাংলাদেশের সান্তাল ছেলেমেয়েরা আজ তাদের জন্য সান্তালি ভাষায় লেখাপড়া করতে পারছে না। হাজার হাজার ছেলেমেয়েকে তারা আজ আটকে রেখেছে। এদের আর যাইহোক সান্তালদের প্রতি তাদের কোন ভালবাসা নাই।
বাংলাদেশের এই .০৩% লোক ওড়িশার সান্তালদের নোংরা রাজনীতির হাতিয়ার। তারা জেনে কিংবা না জেনে বিরাট জনগোষ্ঠীর সর্বনাশ করছে। একটা স্বাধীন বাংলাদেশে সান্তালরা কত অসহায়, তা গভীরভাবে দেখলেই বোঝায় যায়।
করণীয়ঃ
১) সচেতন সান্তালদের এক কাতারে আসা প্রয়োজনঃ ভারত বাংলাদেশ নেপালের অনেক সচেতন সান্তাল আছেন, যারা সান্তালি ভাষাকে হৃদয়ে লালন করেন। তারা এক কাতারে দাড়াতে পারেন, যদিও অনেক চাপ থাকবে, রাজনৈতিক ভাবে তারা প্রতিহত করার চেষ্টা করবে, তবুও এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে এক দিন না এক দিন সুফল পাওয়া যাবে। সান্তালি একাডেমীর মত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারলে, সান্তালি ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতি হবে।
২) অলচিকি ব্যবহার না করাঃ এই কাজে চাপ কম, নিজে এবং নিজের পরিবারকে অলচিকি থেকে দূরে রাখার জন্য নিয়মিত অলচিকির বিষয়ে শিক্ষা দান করলে ভাল ফলাফল আসবে। নিজে অলচিকিকে না বলুন, অন্যদেরকেও দূরে থাকার জন্য বলুন।
৩) রোমান লিপি ব্যবহারঃ প্রতিনিয়ত রোমান সান্তালি ব্যবহার করে, নিজের মধ্যে সান্তালি ভাষার জ্ঞান বৃদ্ধি করা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন