রবিবার, ১ জুন, ২০১৪

বাংলাদেশের বর্তমান সান্তাল যুবক-যুবতীদের ধর্ম ভাবনা এবং আমি



সম্প্রতি বাংলাদেশের  সান্তালদের একটি গ্রামের মাঞ্জহি থান ভাঙ্গা নিয়ে  একজন  যুবক তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেই স্ট্যাটাসকেই ঘিরে বর্তমান সময়ের বাংলাদেশের সান্তাল যুবক-যুবতীদের তাদের ধর্মীয় অনুভুতিগুলো প্রকাশ করতে থাকে। সেই থ্রেড এর তর্ক যুক্তির এক পর্যায়ে আমার ভাবনাগুলোও পোষ্ট করি। এবং সেই পোস্ট গুলোর পরিপ্রেক্ষিতে র্ব্তমান সময়ের কিছু ছবি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
সেই থ্রেড-এ প্রায় 60টারও বেশী পোস্ট হওয়ার পর আমি শেষ প্রান্তে নিম্নের লেখনিটি পোস্ট করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, পোস্টটি অরণ্যের রোদন সামিল হতে পারে। তাই আমার মুল্যবান ভাবনাটুকু (আমার দৃষ্টিটিতে) আমার পাঠকদের জন্য তুলে ধরলাম। 

“আমি সবগুলো পোস্ট ব্যস্ততার জন্য খুব ভালভাবে পড়তে পারিনি তবে যতটুকু পড়েছি, আমার কাছে মনে হয়েছে, সবাই কমবেশী আবেগের জায়গায় দাড়িয়ে যুক্তি কিংবা তর্কগুলো চালিয়ে যাচ্ছে সবারই কমেন্টগুলোতে কমবেশী যুক্তিগুলো দুর্বল কিংবা প্রায়ই অনুপস্থিত যুক্তিহীন তর্ক দিকভ্রান্ত
আমি আমার জায়গা পরিস্কার করি কারণ আমার কমেন্টগুলোতে কিছু বোঝার ক্রুটি ঘটেছে যেমন:
প্রথমত:--------------------------------------------------------------------------------------
আমি ধর্মের বিভক্তি প্রসঙ্গে একটি বৈজ্ঞানিক সুত্রের অবতারনা করেছিলাম কেন এই অবতারণা? কারণ- যুক্তির যুক্তিযুক্ততা প্রমানিত হওয়ার জন্য সুত্রের প্রয়োজন হয় তাই এই সুত্রের অবতারনা কেউ কেউ বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের তুলনা টাকে অন্য চোখে দেখছেন কিন্তু বাস্তবতাটা হলো, যুক্তির একটা জায়গায় যেতে হলে, বিজ্ঞান বা ইতিহাসের দ্বারস্থ হতেই হবে
দ্বিতীয়ত:-----------------------------------------------------------------------------------
কেউ কেউ নিজ ধর্মকে বড় করার জন্য প্রানপণ প্রচেষ্টাগুলো চালিয়ে যাচ্ছেন এখানেও যুক্তির জায়গাটা বড়ই দূর্বল কেন? কারণ- যেমন: একজন বলতে চায়ছে, যারা খ্রিষ্টান ধর্ম পালন করছে তারা সান্তাল হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেওয়ার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে কারণ তারা সংস্কৃতি থেকে অনেক দুরে সরে গিয়েছে তার কথানুসারে, সংস্কৃতি থেকে সরে গেলে জাতিগত পরিচয়ও বদলে যেতে পারে এটা খুবই সেক্যুয়ালার ধ্যান ধারণা পৃথিবীতে বিখ্যাত আদিবাসিদের মধ্যে হুসো, টুটোরা প্রায়ই 90% শতাংশ বিভিন্ন ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে কিন্তু এখনো তাদের নাম রয়ে গিয়েছে
তৃতীয়ত:-----------------------------------------------------------------------------------
আমি বলতে চেয়েছি ভেজাল সবকয়টির মধ্যে ঢুকে পড়েছে তাই নির্ভেজাল হওয়ার আকাঙ্খা যদি থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই সেটা যোক্তিক এবং প্রমানিত অবস্থার মধ্যে হওয়া উচিত যেমন: যিনি সত্যিই সান্তালি সংস্কৃতির মুলধারায় ফিরে যেতে চান, তাহলে তাকে অবশ্যই মুলধারাটাকে খুজে নিতে হবে এখানে আমি বার বার বলার চেষ্টা করেছি, মুলগুলো প্রায়ই এক জায়গায় সময়, পরিস্থিতি, পরিবেশ মানুষকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্তি করে রেখেছে
চতুর্খত:-------------------------------------------------------------------------------------
সংস্কৃতির প্রশ্ন, যেটা খুব জোরেসরেই একজন তুলছেন আমার একটু সময় হয়েছিল, ভারতীয় আদিবাসিদের নিয়ে পড়ার এবং সেখানে কতগুলো বিষয় দেখে আমার আগ্রহ জন্ম নিয়েছে যেমন: সান্তালদের নিয়ে লিখতে গিয়ে সেখানকার প্রবন্ধ একটি কথা খুব জোরের সাথে বলছে যে, ভারতীয় আদিবাসিদের মধ্যে সান্তালরা মোঘল আমল থেকেই তাদের সংস্কৃতি রক্ষার জন্য বৃটিশ, ইউরোপ, পশ্চিমা এবং স্থানীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রচন্ডভাবে লড়াই করছে কিন্তু অনেক কিছু হারিয়েও তারা তাদের ভাষাটাকে সম্পূর্ণরুপে টিকিয়ে রাখতে পেরেছে আসলে পৃথিবীর বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভাষাই সংস্কৃতির মৌলিক জায়গা টুকু মানুষ টিকিয়ে রাখতে পারছে, অন্যগুলো কোন না কোনভাবে হারিয়ে ফেলছে
পঞ্চমত:--------------------------------------------------------------------------------------
খ্রিস্টান ধর্মে ধমান্তরিত হওয়া নিয়ে বিশদ প্রশ্ন তোলা হয়েছে এখানে পরিস্কার হওয়ার কতকগুলো জায়গা রয়েছে যেমন: খ্রিস্টান ধর্মের মুল কাজ কি? ”সর্ব জাতির কাছে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করাএবংবাপ্তাইজিতকরা এটা তাদের ধর্মের প্রধান কাজ উপাসনাও বটে এবং সাথে সাথে তারা তাদের সহমানবদের পরিত্রান পাওয়াও প্রতাশ্যা করে তাহলে প্রশ্ন, তারা কি সেই কাজ করবে না? যদি এই কাজ করতে বাধা দেওয়া হয়, তাহলে তো তাদের ধর্মীয় উপাসনাতেই বাধা দেওয়া হলো এখন এই সুসমাচার শোনার বিনিময়ে কেউ যদি আর্থিকভাবে কোন কিছুর বিনিময় করে বা পায় - এটা যারা দিচ্ছে এবং নিচ্ছে উভয়ই দোষী
ষষ্টত:--------------------------------------------------------------------------------------
খ্রিস্টান ধর্মের বিভপ্তি এটার মধ্যে 321 সাল থেকে ভেজাল ঢোকা শুরু হয়েছে এর ফলে আজ প্রায় 37000টা ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এই বিভক্তির কারণও কিন্তু ধর্মের বিভিন্ন বিষয় গ্রহন এবং বর্জন করা নিয়েই তবে এর মধ্যেও আসলটা এখনও আছে, এটা খ্রিস্টান ধর্মের প্লাস পয়েন্ট কিন্তু অন্যান্য ধর্মগুলোর আদলে আজকেও সান্তালরা একই ধর্মে থেকে বিভক্ত হয়ে পড়েছে ভারতে তো হিন্দু সাধুদের আদলে সান্তালরাও বিভিন্ন সাধু অনুসারি হওয়ার প্রচলন শুরু করেছে তাছাড়াও নামের জন্যও আজকে তারা বিভক্ত হয়ে পড়েছে তাই খ্রিস্টান এবং সান্তাল ধর্মের উভয়রই সুযোগ আছে, সঠিক, শুদ্ধ অবস্থায় ফিরে যাওয়ার হয়ত একজনারটার রাস্তা পাওয়া যাবে অন্যজনার নাও পাওয়া যেতে পারে তবে পৃথিবীর যে অবস্থা, তাতে শুধু আবেগের বশে ধর্মের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় করে যাওয়া হয়ত, অনেককিছু থেকে মানুষকে বঞ্চিত করবে
সপ্তমত:------------------------------------------------------------------------------------
ধর্ম মানব জীবনের বিরাট অংশ এটা শুধু আবেগ দিয়ে নয় যুক্তি দিয়ে পরিপালন হওয়ার মাধ্যমে এর সুফলগুলো পাওয়া যেতে পারে

কোন মন্তব্য নেই:

About

Ghonokuasha Baskey is a Santal writer of Bangladesh. He has started writing since 1985.