শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

২:১৪:০০ PM

পথ চলার অভিপ্রায়



তুমি ঝরো,
শত ক্লান্তির অবসন্ন নিয়ে,
আমি চলি,
তোমার ক্লান্তির ধার ঘেষে।

যদিও চিবুক ডাহুকরা,
ঘুম ভাঙা রাত জাগে।
জড়োয়ার ঘোমটা পরে,
রাতের শিশির হাসে,
ভোরের শুভ্রতা ছোঁবে বলে।

আমরা হাঁটি,
আমাদের হাটার তালে।
পৃথিবী অবাক হয়ে,
তাকিয়ে রয় অপলক চোখে।
নদীর কলতান ছোঁয়,
আমাদের হাটার ছন্দে।
সাগরের ঢেউ জাগে,
হৃদয়ের গহীনে।

পথের চিহ্ন খুঁজে না,
পৃথিবীর সীমানা।
রঙের নেশায় ডাকে না,
রঙিন আমাদেরকে।
পথ প্রান্তর ছুয়ে,
যতদুর যাওয়া যায়।
সেখানেই হোক ঠিকানা,
একান্ত তোমার আমার।

সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

৭:২৫:০০ PM

ওরা দেখাল এখন আমাদের পালা

সেই সাহসী বোনকে আমার লাল গোলাপ শুভেচ্ছা
বাংলাদেশী সান্তালদের মধ্যে সান্তালি ভাষার বর্ণমালা নিয়ে  বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে। মীরজাফরদের আর্বিভাবের জন্যই মুলত এই উত্তেজনা। আর মীরজাফরেরা তো ইংল্যান্ড থেকে আসিনি, এরা এখানকার জাত ভাই। শুধু ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্যই বেড়ে রাখা ভাতে বেগুন দেওয়ার জন্য আটঁসাটঁ বেধে লেগেছে। কি কারণে,  কিসের জন্য তারা বাংলা বর্ণমালায় সান্তালি লিখতে চায়, সান্তালদের কাছে আজো পরিস্কার নয়। তবে তারা আলোচনার চেয়ে রাজপথে নিজেদের মুখ দেখাতে বেশী পছন্দ করছে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। এরা আর কেউ নয় “জাতীয় আদিবাসি পরিষদ”। ভাবুক তাদের অজাতীয় অধিবাসি পরিশোধ নামে আক্ষায়িত করতে পছন্দ করে। তাদের মিছিল মিটিং গুলোতে তিন জন সান্তাল ছাড়া আর কোন সান্তাল দেখা যায় না। তারা মুলত অসান্তালদের নিয়ে মানব বন্ধন, মিটিং মিছিল গুলো করতে পছন্দ করে। এখানেই সমাপ্ত নয়, একদম কিছু রাজনৈতিক দলের লোকেরা আটসাট বেধে তাদের সাথে নেমেছেন। বিষয়টি দেখে মনে হচ্ছে যে, সান্তালি ভাষার বর্ণমালা নিয়ে তাদের চেয়ে সেই রাজনৈতিক সংগঠনগুলোরই মাথা ব্যাথা বেশী।

একটু পেছনে ফিরে যাই- বাংলাদেশ সরকার নৃগোষ্টি শিশুদের জন্য নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক পর্যায়ে লেখাপড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী 2014 সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষায় মাতৃভাষায় বই ছাপানো হবে। ছাপানোর জন্য সান্তালি ভাষায় কোন বর্ণমালা ব্যবহার করা হবে, এ নিয়ে ঘটে বিপত্তি। কারণ সান্তালরা  তাদের ভাষা লেখার জন্য কয়েকটি বর্ণমালা ব্যবহার করে থাকে। যথাক্রমে: রোমান (যা বর্তমানে সান্তালি বর্ণমালা নামে পরিচিত), অলচিকি এবং মাঝে মধ্যে কিছু লেখক বাংলা বর্ণমালায় কিছু বই পত্র লেখার চেষ্টা করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলা বর্ণমালায় সান্তালি ভাষায় ছাপাকৃত বইগুলো পড়ার অযোগ্য। কারণ সেখানে সান্তালি ভাষার উচ্চারণের যে বিকৃতি ঘটেছে, তা কোন সচেতন সান্তালি পাঠক, সেই বই বেশীক্ষণ পড়তে পারে না।  জনশ্রুতি আছে, সেই রকম বই গুলো কলকাতার ফুটপাতে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হয়। কারণ বইগুলো ভাল কোন লাইব্রেরিতে থাকার যোগ্যতা রাখে না।

সে যাহোক, বাংলাদেশে বাংলা বর্ণমালায় সান্তালি লেখার কোন ঐতিহাসিক পেক্ষাপট নেই। তবে ইদানিং “গণস্বাক্ষরতা অভিযান” নামক একটি এনজিও “সাঁওতালি ঐতিহ্য গাথা” নামে একটি বই প্রকাশ করে। কিন্তু বইটির মধ্যে সান্তালি ভাষা বাংলা বর্ণমালায় লেখার কারণে প্রায় 95 ভাগ সান্তালি ভাষা বিকৃতি হয়েছে। বলা যায়, সান্তালদের কাছে বইটি পড়ার জন্য সম্পূর্ণভাবে অনুপোযুক্ত। সেই থেকেই বাংলাদেশে সান্তালি ভাষার বর্ণমালা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু। যারা বইটি লেখা এবং ছাপার পেছনে জড়িত ছিলেন, তারা এই ভুল এবং বিকৃতির দায়ভার কাঁধে নিতে চাননি। বরং তারা তাদের পিট বাচাঁনোর জন্য আপ্রান চেষ্টা করে গেছেন।

বিতর্ক আরো তুঙ্গে উঠে, যখন অজাতীয় অধিবাসি পরিশোধ  সান্তালি ভাষা শেখানোর জন্য প্রকাশিতব্য বইয়ে সরাসরি বাংলা বর্ণমালা ব্যবহার করার পক্ষে রাজপথে দাবি তোলে। কিন্তু এখানে বলে রাখা ভাল যে, বাংলাদিশোম সান্তালি বাইসি, সান্তালি ল্যাংগুয়েজ ডেভলমেন্ট কমিটি সহ বেশ কয়েকটি সংগঠন রোমানের পক্ষে অর্থাৎ সান্তালি বর্ণমালার পক্ষে মত দেয়। এবং এর মধ্যে বাংলাদিশোম সান্তাল বাইসি প্রায় এক বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সভা সেমিনার করে রোমান হরফে সান্তালি ভাষার বই লেখার মেন্ডেট সান্তাল জনগণের কাছ পায়। সেই কারণে তারা মাননীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রালয়ের মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে সান্তালি বর্ণমালায় বই ছাপানোর জন্য মন্ত্রী মহোদয়ের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করে।

রাজপথের দাবিতে অজাতীয় অধিবাসি পরিশোধ বেশ খানিকটা এগিয়ে ছিল। কিন্তু গত 7/2/2013ইং তারিখে সান্তালরা দেখিয়ে দিল, তারা ব্যবসায়িক পণ্য নয়। তাদেরকে বেচাকেনা করা যাবে না। তারাও রাজপথে দাড়াতে পারে। তাদের দাবির জন্য, তাদের ভাষার অক্ষুণ্নতা রক্ষার জন্য। ছবিতে সেই বোনকে আমার লাল গোলাপ শুভেচ্ছা।
৭:২৫:০০ PM

ওরা দেখাল এখন আমাদের পালা

সেই সাহসী বোনকে আমার লাল গোলাপ শুভেচ্ছা
বাংলাদেশী সান্তালদের মধ্যে সান্তালি ভাষার বর্ণমালা নিয়ে  বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে। মীরজাফরদের আর্বিভাবের জন্যই মুলত এই উত্তেজনা। আর মীরজাফরেরা তো ইংল্যান্ড থেকে আসিনি, এরা এখানকার জাত ভাই। শুধু ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্যই বেড়ে রাখা ভাতে বেগুন দেওয়ার জন্য আটঁসাটঁ বেধে লেগেছে। কি কারণে,  কিসের জন্য তারা বাংলা বর্ণমালায় সান্তালি লিখতে চায়, সান্তালদের কাছে আজো পরিস্কার নয়। তবে তারা আলোচনার চেয়ে রাজপথে নিজেদের মুখ দেখাতে বেশী পছন্দ করছে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। এরা আর কেউ নয় “জাতীয় আদিবাসি পরিষদ”। ভাবুক তাদের অজাতীয় অধিবাসি পরিশোধ নামে আক্ষায়িত করতে পছন্দ করে। তাদের মিছিল মিটিং গুলোতে তিন জন সান্তাল ছাড়া আর কোন সান্তাল দেখা যায় না। তারা মুলত অসান্তালদের নিয়ে মানব বন্ধন, মিটিং মিছিল গুলো করতে পছন্দ করে। এখানেই সমাপ্ত নয়, একদম কিছু রাজনৈতিক দলের লোকেরা আটসাট বেধে তাদের সাথে নেমেছেন। বিষয়টি দেখে মনে হচ্ছে যে, সান্তালি ভাষার বর্ণমালা নিয়ে তাদের চেয়ে সেই রাজনৈতিক সংগঠনগুলোরই মাথা ব্যাথা বেশী।

একটু পেছনে ফিরে যাই- বাংলাদেশ সরকার নৃগোষ্টি শিশুদের জন্য নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক পর্যায়ে লেখাপড়া করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী 2014 সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষায় মাতৃভাষায় বই ছাপানো হবে। ছাপানোর জন্য সান্তালি ভাষায় কোন বর্ণমালা ব্যবহার করা হবে, এ নিয়ে ঘটে বিপত্তি। কারণ সান্তালরা  তাদের ভাষা লেখার জন্য কয়েকটি বর্ণমালা ব্যবহার করে থাকে। যথাক্রমে: রোমান (যা বর্তমানে সান্তালি বর্ণমালা নামে পরিচিত), অলচিকি এবং মাঝে মধ্যে কিছু লেখক বাংলা বর্ণমালায় কিছু বই পত্র লেখার চেষ্টা করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলা বর্ণমালায় সান্তালি ভাষায় ছাপাকৃত বইগুলো পড়ার অযোগ্য। কারণ সেখানে সান্তালি ভাষার উচ্চারণের যে বিকৃতি ঘটেছে, তা কোন সচেতন সান্তালি পাঠক, সেই বই বেশীক্ষণ পড়তে পারে না।  জনশ্রুতি আছে, সেই রকম বই গুলো কলকাতার ফুটপাতে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হয়। কারণ বইগুলো ভাল কোন লাইব্রেরিতে থাকার যোগ্যতা রাখে না।

সে যাহোক, বাংলাদেশে বাংলা বর্ণমালায় সান্তালি লেখার কোন ঐতিহাসিক পেক্ষাপট নেই। তবে ইদানিং “গণস্বাক্ষরতা অভিযান” নামক একটি এনজিও “সাঁওতালি ঐতিহ্য গাথা” নামে একটি বই প্রকাশ করে। কিন্তু বইটির মধ্যে সান্তালি ভাষা বাংলা বর্ণমালায় লেখার কারণে প্রায় 95 ভাগ সান্তালি ভাষা বিকৃতি হয়েছে। বলা যায়, সান্তালদের কাছে বইটি পড়ার জন্য সম্পূর্ণভাবে অনুপোযুক্ত। সেই থেকেই বাংলাদেশে সান্তালি ভাষার বর্ণমালা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুরু। যারা বইটি লেখা এবং ছাপার পেছনে জড়িত ছিলেন, তারা এই ভুল এবং বিকৃতির দায়ভার কাঁধে নিতে চাননি। বরং তারা তাদের পিট বাচাঁনোর জন্য আপ্রান চেষ্টা করে গেছেন।

বিতর্ক আরো তুঙ্গে উঠে, যখন অজাতীয় অধিবাসি পরিশোধ  সান্তালি ভাষা শেখানোর জন্য প্রকাশিতব্য বইয়ে সরাসরি বাংলা বর্ণমালা ব্যবহার করার পক্ষে রাজপথে দাবি তোলে। কিন্তু এখানে বলে রাখা ভাল যে, বাংলাদিশোম সান্তালি বাইসি, সান্তালি ল্যাংগুয়েজ ডেভলমেন্ট কমিটি সহ বেশ কয়েকটি সংগঠন রোমানের পক্ষে অর্থাৎ সান্তালি বর্ণমালার পক্ষে মত দেয়। এবং এর মধ্যে বাংলাদিশোম সান্তাল বাইসি প্রায় এক বছর ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সভা সেমিনার করে রোমান হরফে সান্তালি ভাষার বই লেখার মেন্ডেট সান্তাল জনগণের কাছ পায়। সেই কারণে তারা মাননীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রালয়ের মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে সান্তালি বর্ণমালায় বই ছাপানোর জন্য মন্ত্রী মহোদয়ের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করে।

রাজপথের দাবিতে অজাতীয় অধিবাসি পরিশোধ বেশ খানিকটা এগিয়ে ছিল। কিন্তু গত 7/2/2013ইং তারিখে সান্তালরা দেখিয়ে দিল, তারা ব্যবসায়িক পণ্য নয়। তাদেরকে বেচাকেনা করা যাবে না। তারাও রাজপথে দাড়াতে পারে। তাদের দাবির জন্য, তাদের ভাষার অক্ষুণ্নতা রক্ষার জন্য। ছবিতে সেই বোনকে আমার লাল গোলাপ শুভেচ্ছা।

About

Ghonokuasha Baskey is a Santal writer of Bangladesh. He has started writing since 1985.