বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

৬:৪৯:০০ PM

ব্যানার পরিষদ এর বিজ্ঞাপন ও বাংলাদেশের সান্তাল যুব সমাজ



সময়ের স্রোতে ইতিহাস অন্য রকম হয়ে যায়। এর জ্বলন্ত প্রমাণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। এক সময় যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, এরা একটা সময় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তাদের গাড়িতে উড়ায়। এরাই সত্যিকারের বাংলাদেশি হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে আর প্রমাণ স্বরূপ বাংলাদেশ তাদের সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে বসায়।

এই ইতিহাস আমাদের সান্তাল সমাজের বেলাও যেন সত্যি হয়ে যাচ্ছে। কিভাবে?

এক সময়কার ব্যানার সর্বস্ব বাম রাজনীতির তাবেদারেরা আজ সাচ্চা আদিবাসি হয়ে যাচ্ছে।  বাংলাদেশের বিরোধীদের যেমন বিরাট সাপোর্টার আজ বাংলাদেশে বিদ্যমানঠিক তেমনি এই এক সময়কার আদিবাসি নামক ফেরিওয়ালাদের অনেক শিক্ষিত বিবেকবান মানুষ আজ সাপোর্ট করতে শুরু করেছে।  

কেন এই সাপোর্ট?

এই মুহূর্তে সান্তাল সমাজের দিকে যদি ভাল করে তাকাই, কিছু বিষয় লক্ষ্যনীয়- যেমন

) যুব সমাজের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে;
একদিকে স্বপ্ন, এক দিকে অর্থনৈতিক অনাটন, এক দিকে উন্নত সমাজের  ঝলকানি, দিকে নিজেদের সঙ্কীর্ণতা। রকম এক ভারসাম্য হীন অবস্থায় চিন্তার চেতনার মতিভ্রম হওয়া স্বাভাবিক। সান্তাল যুব সমাজের সেটিই হচ্ছে।

) যারা সমাজকে বিকেয়ে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে- তাদের পেছনে যুব সমাজ কেন?
প্রাপ্তি সব মানুষের প্রিয় বিষয়। ব্যানার নামক বিজ্ঞাপন গুলো তাদের একটা জায়গায় নিয়ে গিয়েছে। যেমন-

) সরকারের নজরঃ
এই সুবিধা নিয়ে তারা কিছু সুযোগ সুবিধা উপভোগ করার সুযোগ পাচ্ছে, সেখানে শিক্ষিত কিছু যুব সমাজের  পিছু নেয়াটাই  - স্বাভাবিক। সে কারণে অনেক শিক্ষিতরা তাদের তাঁবেদারি করছে। (এখন সরকারি আদিবাসি স্পন্সরশীপ/বৃত্তি প্রায় সব জায়গায় তাদের দখলে চলে গিয়েছেএটার জন্যেও তো সান্তাল যুবক-যুবতীরা তাদের পেছনে দৌড়াবে, তাই না?

) NGO দের নজরঃ
হ্যাঁ এটা আসলে নগদ প্রাপ্তি। এই ব্যানারের বিনিময়ে তারা নিজেদেরকে পরিচিত করতে পেরেছে, যার ফলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে তাদেরকে ডাকা হয়, বিদেশে হাওয়াই জাহাজে চড়ে তারা ঘুরতে পারে। রকম লোভনীয় জায়গায় কেন সান্তাল যুবকরা ভিড় করতে চাইবে না?

) সমাজে সংগঠন না থাকাঃ
যে বনে বাঘ থাকে না, সে বনে বিড়ালিই বাঘ হয়ে যায়। এদের বেলাও তাই হয়েছে।

গিভ এন্ড টেকঃ
সারা দুনিয়ায় তাকালে সব জায়গায় দেখবেন, দেয়া নেয়ার ব্যাপারটা রয়েছে। তাই এই ব্যানারদের যারা দিচ্ছে, তারাও কিছু নিচ্ছে। এই নেয়াটা অনেক সঙ্গোপনে, লোক চক্ষুর আড়ালে। আর দেয়া টা কখনো সুবিধা ভোগ , কখনো নীরবতার অসুখ, কখনো চোখ থাকিতে অন্ধ। পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় ইতিহাস নাকি সাগর সেচেছে, আর তো একটা ল্যাংড়া জাতি, একে বেচতে তো সময় লাগে না।

৪) সমাজে নৈতিক অবক্ষয়তাঃ
একটা সময় নিজেকে সান্তাল বলে পরিচয় দিতে খুব ভাল লাগত, কারণ নিজেকে সে নামে পরিচয় দিলে লোকেরা বলত “ভাল মানুষ”, কিন্তু এখন কি বলে জানেন? একটা নিগৃহীতার সুরে, কিছুটা শ্লেষ মিশিয়ে - “সাতাল”। খাওয়ার দোকানে আমার চায়ের কাপ, খাওয়ার প্লেট, জলের গ্লাসও আলাদা হয়ে যায়। এখনকার যুব সমাজকে লোকেরা কি নাম দিচ্ছে - আমি ঠিক বলতে পারব না, তবে দু একজন যে বাটপার নাম পাচ্ছে এ বিষয়ে হলপ করে বলতে পারি। আজকে আমরা যুব সমাজরা অন্যদের কাতারে যাওয়ার জন্যে মরিয়া, কিন্তু আমাদের যাওয়ার রাস্তাটা কি ঠিক আছে কিনা আমরা বুঝতে পারছিনা, তাই দ্রুততার সাথে চলতে চলতে আমরা নিজেরা নিজেদের খেই হারিয়ে ফেলছি। মাঝে মাঝে নৈতিক অনৈতিক এর পার্থক্যটা ভুলে যাচ্ছি। একটা উদাহরণ দেই--
ক) ব্যানার পরিষদ একটা সময়, সমাজের অর্থা আদিবাসি সমাজের বিচারের দালালি করেছে, সেখান টু পায়েস কামিয়েছে।
খ) সান্তালদের প্রাণের দাবি সান্তালি হরফে সান্তাল শিশুরা সান্তালি শিখবে, সেই বাড়া ভাতে বেগুণ চালিয়ে দিয়েছে।
গ) ব্যানার পরিষদ অআদিবাসি লোকেদের হাতের পুতুল হয়ে পুরো আদিবাসি সমাজকে নাচ্চাছে।
ঘ) ইতিমধ্যে তারা সমাজে বড় ধরনের বিভেদ তৈরি করে ফেলেছে, সান্তাল জাতিকে তারা ধর্মীয় পরিচয়ের আবর্তে আবদ্ধ করে টুকরো টুকরো ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছে। এটাও আবার করেছে, নাস্তিকতাবাদের ছাতার তোলে দাঁড়িয়ে, তাদের ছত্রছায়ায়।
উপরোক্ত কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে, তারা ইতিমধ্যে সফল হয়েছে। তাদের সফলতাকে আরও দ্রুতগামী করে তুলছে, কিছু যুবক যুবতী যারা নৈতিক অনৈতিক প্রভেদ বা প্রশ্নগুলো বিবেচনা না করেই পাগলের মত তাদের পেছনে ছুটছে। তাদেরকে শেল্টার দিচ্ছে।

বিজ্ঞাপণঃ
বিজ্ঞাপন প্রথমে চোখে ধরে, তারপর মাথায় ঢুকে, তারপর ছুটে হৃদয়ে। একে যত বার বার দেখাবেন ততটাই এ জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। হৃদয়ে যদি একবার গেঁথে যায় তবে ছাড়ানো বড়ই কঠিন, যেমনটা প্রেমের আঠা। ব্যানার বিজ্ঞাপনের ভাষা, এ ভাষার আকুতি আছে, আছে হৃদয় হরণ করার মত আকর্ষণ। এ আকর্ষণে মুসগুল হওয়াও স্বাভাবিক, নেশার মত আসক্তিও পেয়ে বসা অমূলক নয়। কিন্তু তারপরও ভোক্তার হাতে সব কিছু, ভোক্তার শিক্ষিত বিবেকই পণ্যের গুণাগুণ বিচার করবে।

  

About

Ghonokuasha Baskey is a Santal writer of Bangladesh. He has started writing since 1985.